নিহত সুকু ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।
মনসা-গানের আসরে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন মৃতের পরিবারের আরও দুই সদস্য। শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ মালদহের ইংরেজবাজার থানার মহদিপুরের খাসি মারি গ্রামে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোমাবাজি ও গুলির লড়াই শুরু হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার পর থেকে আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে পুরো গ্রাম। একই সঙ্গে পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, ঘটনার সময় একাধিকবার খবর দেওয়া হলেও ঘটনাস্থলে আসেনি পুলিশ। সে কারণেই একজনকে খুন হতে হল।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শুকু ঘোষ (৪৫)। তাঁর বাড়ি মহদিপুরের খাসিমারির কলোনি গ্রামে। আহতদের নাম ভণ্ডু ঘোষ এবং ছবি ঘোষ। ভণ্ডুর বুকে এবং ছবির মাথায় গুলি লাগে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতেই তাদের মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়।
এই বিষয়ে মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গ্রাম্য বিবাদের জেরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই । ঘটনায় একজন মারা গিয়েছে। আহত হয়েছে দু’জন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার এবং একজনকে আটক করা হয়েছে। পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইংরেজবাজার থানার মহদিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের খাসিমারি গ্রামে পরাণ ঘোষের বাড়ির মনসা গানের আসর বসেছিল । অভিযোগ, গানের আসরে স্থানীয় বাসিন্দা ধনা ঘোষের সঙ্গে বচসা শুরু হয়ে যায় শুকু ঘোষের। পরিস্থিতি খারাপ দেখে শুকু বাড়িতে পালিয়ে যান। এর পরে ধনা ঘোষের নেতৃত্বে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল গ্রামের ভিতরে ঢুকে বোমাবাজি এবং এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। শুকু ঘোষেরাও পাল্টা তির ছোড়ে বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, ধনা ঘোষের লোকেরা শুকু ঘোষকে প্রথমে পরপর দুটি গুলি করেএবং পরে হাসুয়া দিয়ে কোপাতে থাকে। শুকু ঘোষের দুই ভাগ্নে ভন্ডু এবং ছবি ছুটে গেলে তাঁদের উপরেও চড়াও হয়। ভন্ডুর বুকের বাঁ দিকে ও ছবির মাথায় গুলি লাগে। এই ঘটনায় গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা প্রতিরোধ করলে ধনারা দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যু হয় শুকু ঘোষের। শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদি, ডিএসপি সিদ্ধার্থ দোরজি সহ উচ্চপদস্থ কর্তারা যান। ঘটনাস্থল থেকে প্রচুর গুলির খোল উদ্ধার হয়।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামেই একটি পাঁচ বিঘা পুকুর নিয়ে শুকু ঘোষদের সঙ্গে ধনাদের গোলমাল চলছিল। শুকুরা সেই পুকুরটি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করত। অভিযোগ ধনা তা জোর করে দখল করার চেষ্টা করছে। সেই আক্রোশে এদিন দলবল নিয়ে গ্রামে তাণ্ডব চালায়। নিহতের দিদি তথা আহত ভন্ডু ঘোষের মা যামিনী দেবী বলেন, ‘‘পুকুরের সমস্ত কাগজ পত্র আমাদের নামেই রয়েছে। তবুও ধনা ঘোষেরা দখল করার চেষ্টা করছে। আমরা চাই পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে শাস্তি দিক। মনসা গানের আসরে গোলমাল হওয়ায় আতঙ্কিত পরান বাবুও। তিনি বলেন,এদিনই ছিল গানের শেষ দিন। কি ভাবে এমন হল তা আমি বলতে পারব না।’’
এই ঘটনায় ইংরেজবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃতের পরিবার। ঘটনায় পুলিশ একজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম বিনয় ঘোষ। এদিনই তাঁকে সাতদিনের হেফাজতে চেয়ে আদালতে পেশ করেছে পুলিশ। এই বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা তথা ইংরেজবাজারের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের পবিত্র মন্ডল বলেন, গ্রাম্য বিবাদ নিয়ে দুই দলের গোলমাল। এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।