ক্ষীর খেয়ে গেল চোর

কার্নিশ বেয়ে দোতালায় উঠে আস্ত গ্রিলের জানালা কেটে ঘরে ঢুকেছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু চুরি করতে ঢুকেও ফ্রিজে রাখা রুটি, লাউয়ের তরকারি আর ক্ষীর দেখে লোভ সামলাতে পারেনি তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৬ ০৭:৫২
Share:

চুরির পরে এলোমেলো ঘর। — নিজস্ব চিত্র

কার্নিশ বেয়ে দোতালায় উঠে আস্ত গ্রিলের জানালা কেটে ঘরে ঢুকেছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু চুরি করতে ঢুকেও ফ্রিজে রাখা রুটি, লাউয়ের তরকারি আর ক্ষীর দেখে লোভ সামলাতে পারেনি তারা। সে সব সাবাড় করে বোতল থেকে জল খাওয়ার পর তাদের তৃপ্তির ঢেঁকুড় উঠেছিল কিনা জানা নেই। কিন্তু খাওয়াদাওয়ার পর সিগারেটে সুখটান দিতে যে তারা ভোলেনি তাও জানতে পেরেছে পুলিশ। এরপরেই গৃহকর্তার আলমারি থেকে অলঙ্কার ও নগদ টাকাপয়সা হাতিয়ে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

মালদহের চাঁচলের ভারতীনগরে এক প্রতিষ্ঠিত আইনজীবীর বাড়িতে বুধবার রাতে ওই চুরির ঘটনাটি ঘটে। আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য চুরি, ডাকাতিতে অভিযুক্ত অনেকেই তাঁর দ্বারস্থ হন। কিন্তু যেভাবে দুষ্কৃতীরা দোতালার আস্ত জানালা খুলে বাড়িতে ঢুকে সমস্ত চুরি করে পালিয়েছে তাতে স্তম্ভিত ওই আইনজীবী। এই ঘটনা বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশেরও দুঃশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে।

চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন,‘‘পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। বেশ কিছু সূত্র মিলেছে। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।’’

Advertisement

পুলিশ ও আইনজীবীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, চাঁচল মহকুমা আদালতের উল্টোদিকে রাস্তার ধারে তিনতলা বাড়িটিই আইনজীবী চিন্ময় মিশ্রের। দোতালায় থাকেন তাঁরা। বুধবার সকালে কয়েকদিনের জন্য কলকাতায় গিয়েছিলেন চিন্ময়বাবু। বাড়িতে ছিলেন তাঁর বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সহদেব মিশ্র ও চিন্ময়বাবুর স্ত্রী সঙ্গীতাদেবী। তাঁর মা ছোট ভাইয়ের কাছে দিল্লিতে রয়েছেন। চিন্ময়বাবুর শোওয়ার ঘরের জানালা খুলেই ভিতরে ঢুকেছিল দুষ্কৃতীরা। চিন্ময়বাবু বাড়িতে না থাকায় সঙ্গীতাদেবী আট বছরের ছেলে ও ন’মাসের মেয়েকে নিয়ে এ দিন অন্য ঘরে শুয়েছিলেন। পাশের ঘরে ছিলেন সহদেববাবু।

জানা গিয়েছে, লোহার আস্ত জানালা খুলে ফেলে ভিতরে ঢুকে ড্রয়ার থেকে চাবির গোছা নিয়ে বাড়ির সবকটি আলমারি খোলে দুষ্কৃতীরা। ১০ ভরি সোনার অলঙ্কার ও নগদ ৬০ টাকা দুষ্কৃতীরা হাতিয়ে নেয় বলে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে। সঙ্গীতাদেবীর মাথার পাশে রাখা দামী মোবাইলটিও হাতিয়ে নেয় তারা। ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ বাথরুমে যাওয়ার সময় চুরির বিষয়টি নজরে আসে সহদেববাবুর।

রাতে শ্বশুরমাশাইয়ের হইচই শুনে উঠতে গিয়েই সঙ্গীতাদেবী দেখেন তাঁর মাথা ঝিমঝিম করছে। সারা শরীরে অস্বস্তি। আর তাতেই তাদের সন্দেহ ঘুমের কিছু স্প্রে করে বেহুঁশ করে দেওয়া হয়েছিল। বাড়িতে চুরির কথা জেনে এ দিন বিকেলেই কলকাতা থেকে তড়িঘড়ি ফিরে আসেন চিন্ময়বাবু! তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের জন্য স্ত্রীকে রাতে একাধিকবার উঠতে হয়। বাবারও ঘুম খুব হালকা। ফলে স্প্রে করে যে তাঁদের বেহুঁশ করা হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। বহু মামলা লড়েছি। কিন্তু আস্ত জানালা খুলে ভিতরে ঢুকে, স্প্রে ছড়িয়ে লোকজনকে বেহুঁশ করার পর আয়েশ করে খেয়েদেয়ে এমন চুরির কথা কখনও শুনিনি।’’

বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত অভিযুক্তদের হদিশ মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন