আলোকিত: সার্কিট বেঞ্চের অস্থায়ী ভবন। নিজস্ব চিত্র
হাতে আর মোটে দু’দিন। সার্কিট বেঞ্চের অস্থায়ী ভবনে কখনও ঢুকছে গদি আঁটা চেয়ার, কখনও কাঠের ডেস্ক। চত্বরে গেলে দেখা যাচ্ছে এই সব আসবাব রং করা, সাজানোর কাজ চলছে পুরোদমে নাওয়া খাওয়া ভুলে। ভবনকে সাজিয়ে উদ্বোধনী মঞ্চকেও তৈরি করতে দিনরাত ভুলে কাজ করছেন সকলে।
এই আবহে জলপাইগুড়ি জুড়ে একটাই আলোচনা, কেমন হবে সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান?
প্রশাসন সূত্র জানতে পেরেছে, মঞ্চের পিছনে কোনও ফ্লেক্স রাখা হবে না। ঘেরাটোপ থাকবে সাদা ও ইট রঙের কাপড়ের। প্রোটোকলের গেরোয় উদ্বোধনে ঢুকতে পারবে না আমজনতাও।
বস্তুত, এই নিয়ে তুমুল অসন্তোষ আইনজীবী মহলে। তাঁদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, এক সময়ে সার্কিট বেঞ্চ নিয়ে আন্দোলনের প্রথম সারিতে থাকা অনেকের কাছেই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছনো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ফলে তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন আটকে যেতে পারেন প্রোটোকলের গেরোয়। সেই ক্ষোভ গিয়ে পড়তে পারে প্রশাসন এবং শাসকদলের উপরেই।
কিন্তু এই নিয়ে তৃণমূল বিশেষ ভাবতে নারাজ। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, এত বড় অনুষ্ঠানে কিছু ক্ষোভ তো থাকবেই। আর যেখানে ভিভিআইপি-রা আসবেন, সেখানে কড়াকড়িও থাকবে। বরং এত বড় ঘটনার সফল প্রচারই এখন মূল লক্ষ্য তৃণমূলের।
বেঞ্চ উদ্বোধনের আগের দিন, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বাসিন্দাদের বাড়িতে আলো জ্বালিয়ে উৎসব পালনের ডাক দেয় মূলত অরাজনৈতিক সংগঠন জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ দাবি আদায় সমন্বয় কমিটি। লিফলেট ছাপিয়ে চলছে প্রচারও। তাতে সাড়া মিলেছে বলেও দাবি কমিটির। কমিটির ব্যানারেই এত দিন আন্দোলন হয়েছে। বুধবার হঠাৎই এসজেডিএ জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে তারাই শহর জুড়ে আলো জ্বালাবে, প্রয়োজনে বাড়িগুলিও সাজিয়ে দেবে।
তৃণমূল পরিচালিত পুরসভাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতি অলি-গলি আলোয় সাজিয়ে দিতে হবে। এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তীই জেলা তৃণমূলের সভাপতি। তিনি বলেন, “আগামী শুক্রবার সন্ধে ৬টায় আলো জ্বালিয়ে বিজয় উৎসবের উদ্বোধন হবে। প্রয়োজনে আমরা ও পুরসভা মিলে শহরের সব বাড়ি আলোয় সাজিয়ে দেব।”
এখানেই শেষ নয়। তৃণমূল ঠিক করেছে, আগামী শুক্রবার বিজয় মিছিল হবে শহরে। সেটি মশাল মিছিলও হতে পারে। উদ্বোধনের দিন জলপাইগুড়ি শহরের সব রাস্তার দু’পাশে মানববন্ধন করে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেওয়া হবে। রবিবার হবে আবির উৎসব। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মালবাজার, ধূপগুড়ি-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বাসিন্দাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। আলোয় সাজবে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ারও।
কৃতিত্ব নিতে উঠে পড়ে লেগেছে বিজেপিও। তারাও শহর জুড়ে ফ্লেক্স লাগানোর কথা ঘোষণা করেছে। এ দিন পর্যন্ত অবশ্য বিজেপির কোনও ফ্লেক্স নজরে পড়েনি। সমন্বয় কমিটি জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার জেলা আদালতের সামনে মোম জ্বালানো হবে, বেঞ্চের দাবিতে মৃত আন্দোলনকারীদের স্মরণে।
এর মধ্যে অনুষ্ঠান মঞ্চের পিছনে কোনও ফ্লেক্স না লাগানোর কথাও জানতে পেরেছে প্রশাসন। সেই সূত্রের দাবি, মঞ্চের পিছনের কাপড়ে পরপর সামান্তরাল ভাজ থাকবে। কলকাতা হাইকোর্টের সাম্প্রতিক একটি অনুষ্ঠানের ছবি পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। সেই মতোই তৈরি হচ্ছে মঞ্চ এবং প্যান্ডেল।
বুধবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘সেরিমোনিয়াল লাঞ্চ’ বা আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজের খাবারের তালিকাও। বাহারি পদ নয়, হাল্কা বাঙালি খাবারেই আপ্যায়ন করা হবে অতিথিদের। আদালত ভবনের তিনতলায় বুফের ব্যবস্থা থাকবে। সেখানেও সামিয়ানা তৈরি হচ্ছে। সামিয়ানার কাপড়ে এক ধরনের বিশেষ স্প্রে করা হবে, যাতে অন্তত চার ঘণ্টা আগুন লাগার আশঙ্কা থাকবে না।
প্রশাসনের তরফে উদ্বোধনী মঞ্চের পিছনে টাঙানোর ফ্লেক্সের নানা নকশা তৈরি করেছিল। হাইকোর্টের ছবি অথবা জলপাইগুড়ির সার্কিট বেঞ্চ ভবনের ছবি থাকতে পারে ধরে নিয়ে সেই প্রস্তুতিও হয়েছিল। প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, মঞ্চের পিছনে কোনও রকম ফ্লেক্স পছন্দ নয় হাইকোর্টের। কলকাতা হাইকোর্টের আগের একটি অনুষ্ঠানের ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। সেই অনুষ্ঠানে মঞ্চের পিছনে কোনও ছবি বা ফ্লেক্স দেখা যাচ্ছে না। তবে এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘শেষ মুহূর্তে পিছনে কোনও ফ্লেক্স বা বোর্ড লাগানোর নির্দেশ দিলে, সে ব্যবস্থাও করে দেওয়া যাবে।’’
উদ্বোধনের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকে আদালত ভবনের পরিদর্শন করার কথা পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের। আজই কলকাতায় মন্ত্রিসভার বৈঠক রয়েছে। পরিদর্শন সেরে বাগডোগরা থেকে বিমানে কলকাতায় যাওয়ার কথা গৌতমবাবুর। বুধবার রাতে জলপাইগুড়ি পৌঁছেছেন পর্যটনমন্ত্রী।