Panchayat Election

‘টিকিট-দ্বন্দ্বে’ জোড়া খুন, মেনে নিতে পারছে না গ্রাম

বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েতের ‘টিকিট-দ্বন্দ্বে’ উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ব্লকের চুটিয়াখোর গ্রাম পঞ্চায়েতের দিঘাবানা বস্তিতে মূলের দুই পক্ষের মধ্যে গন্ডগোলে গুলি চলে বলে অভিযোগ।

Advertisement

অভিজিৎ পাল

চোপড়া শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:১৪
Share:

শোকার্ত: মৃত ফইজুর রহমানের পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়লেন। শুক্রবার। চোপড়ার দিঘিবানা বস্তি গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

পঞ্চায়েতের প্রার্থীপদকে কেন্দ্র করে দুটো মানুষ এ ভাবে খুন হবে, তা মেনে নিতে পারছেন না দিঘাবানা বস্তির বাসিন্দারা। শুক্রবারও গ্রাম জুড়ে শোকস্তব্ধ চেহারা। দিঘাবানা বস্তির দুই প্রান্তে গুলিতে নিহত দু’জনের বাড়ি। থেকে থেকে সেই বাড়ি দু’টি থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। সামাল দিতে এ বাড়ি-ও বাড়ি ছুটে যাচ্ছেন গ্রামের মহিলারা। নিহতেরা কেউই সক্রিয় রাজনীতি করতেন না বলে দাবি পরিবারের। এ দিন সকালে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে দিঘাবানা মোড়ে রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। খবর পেয়ে, এলাকায় পৌঁছন বিধায়ক হামিদুল রহমান। পরে, স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ উঠে যায়। এলাকায় পুলিশের টহলদারি চলছে। পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশিচালানো হচ্ছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েতের ‘টিকিট-দ্বন্দ্বে’ উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ব্লকের চুটিয়াখোর গ্রাম পঞ্চায়েতের দিঘাবানা বস্তিতে মূলের দুই পক্ষের মধ্যে গন্ডগোলে গুলি চলে বলে অভিযোগ। সেখানে ছ’জন আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় ফইজুর রহমানকে (৬২) ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় মহম্মদ হাসুর (৫৫)। শুক্রবার উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে হাসুর মৃতদেহের ময়না-তদন্ত হয়। আর রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ফইজুরের দেহের ময়না-তদন্ত হয়। আহত চার জনের শিলিগুড়ির বেসরকারি নার্সিংহোমেচিকিৎসা চলছে।

এ দিন সকালেও দিঘাবানার পরিবেশ থমথমে ছিল। নিহত মহম্মদ হাসুর পরিবার অভাবি। তিনি শিলিগুড়িতে কখনও টোটো চালিয়ে, কখনও ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। সেখানেই থাকতেন। হাসুর বড় ছেলেও ভিন্ রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। রোজা রাখতে দিন দু’য়েক আগে, শিলিগুড়ি থেকে দিঘাবানা বস্তিতে ফিরেছিলেন হাসু। স্ত্রী রাকিবা বলেন, ‘‘বাড়িতেই তো থাকত না, রাজনীতি করবে কি? ভ্যান চালিয়ে যা রোজগার হয়, তাতেই চলত সংসার। মোটরবাইকে চাপিয়ে পাড়ার একটা ছেলে মিটিংয়ে নিয়ে গেল। তার পর কী করে যে এমন হল, বুঝেই উঠতে পারছি না!’’

Advertisement

গ্রামের ঢোকার রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলেই ফাইজুরের বাড়ি। তুলনামূলক ভাবে তাঁদের পরিবার সচ্ছল। ফইজুরে কিছু দিন পরে হজ করতে যাওয়ার কথা ছিল বলে বাড়ি লোকেরা দাবি করলেন। ইতিমধ্যে পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে তাঁর। তাঁর ছোট ছেলে সাবির আলম বলেন, ‘‘বাবা রাজনীতি করতেন না। প্রার্থী হিসেবে কাকার নাম বৈঠকে ঠিক হয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পথেই আচমকা গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে, এ ভাবে কেউ খুন হতে পারে, তা কখনও ভাবিনি!’’

শুক্রবার সকালে নিহতদের পরিবারের লোকেদের সঙ্গে দেখা করেন বিধায়ক হামিদুল রহমান। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা (মৃতেরা) সক্রিয় ভাবে কেউ রাজনীতি করতেন না। সাধারণ সমর্থক ছিলেন মাত্র। পুলিশকে বলেছি, দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করে শাস্তি দিতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন