গাছের কোটরে নিজেদের নিশ্চিন্ত আশ্রয়েও বিপণ্ণ হয়ে পড়েছে টিয়াপাখির দল।
বিপণ্ণ মানুষের লোভের জন্য। গোধূলি নামতেই কখনও শিকারির হাত তুলে নিচ্ছে ছানা। কখনও আবার কোটরে হাত ঢুকিয়ে তুলে নেওয়া হচ্ছে পরিবারের খানিকটা বড় সদস্যকে। চুপিচুপি টিয়া চলে যাচ্ছে চোরাবাজারে। ‘অর্ডার’ মতো পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন বাড়িতেও।
অভিযোগ, কোচবিহারের তুফানগঞ্জের নাগরুরহাট ও দিনহাটার গোসানিমারি বনাঞ্চলে গাছ-গাছালিতে থাকা ওইসব ডেরাতে হানা দিয়ে এ ভাবেই টিয়াপাখি বিক্রির কারবারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাচারচক্রে জড়িতরা। গোপনে টিয়ার ছানা ধরে দু’শো থেকে পাঁচশো টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বড় পাখির দাম দ্বিগুণ। ওই ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে পরিবেশ ও পাখিপ্রেমীদের মধ্যে। এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর দাবিও তুলেছেন তারা। বন দফতর জানিয়েছে, গত বছর পাখি বিক্রির কারবারে জড়িত সন্দেহে একজনকে ধরা হয়েছিল। এ বারও দুই এলাকায় নজরদারি রয়েছে। ওই প্রবণতা বন্ধে এলাকায় সচেতনতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কোচবিহারের ডিএফও বিমান বিশ্বাস বলেন, “এ বার পাখি ধরার চেষ্টার কোনও ঘটনা এখনও নজরে আসেনি। সতর্ক নজরদারি রয়েছে। ওই দুই এলাকাতে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হচ্ছি আমরা।”
বাসিন্দারা জানান, কোচবিহারের নাগরুরহাট ও গোসানিমারি দুই এলাকাতে শালবাগান রয়েছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে অসংখ্য টিয়াপাখির বসবাস। শীতের মরসুমের শেষ থেকে পাখি ধরার টানে পাচারকারীরা আসরে নামে। এ বারেও নজরদারির ফাঁক গলে গাছে উঠতে পটু কয়েকজনকে ওই কাজে লাগানো হয়েছে। ৫০ থেকে ১০০ টাকার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে পাখির ছানা কিনে নিচ্ছে কারবারের জড়িতরা। ওই পাখিই হাত বদলে কোচবিহার তো বটেই অসমের কিছু এলাকাতেও পাচার হচ্ছে।
পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাস গ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “চোরাবাজারে টিয়ার ভাল চাহিদা রয়েছে। বিধি ভেঙে নানা ভাবে পাখি বিক্রির ওই কারবার চলছে। শুধু ওই দুই জঙ্গল নয়, কোচবিহার শহরের রাজবাড়ির পেছনেও টিয়ার ডেরা আছে। সেখানেও পাখি ধরা হয়। নজরদারিতে খামতি থাকাতেই রমরমিয়ে কারবার চলছে। স্কুলস্তর থেকে ছোটদের পাখিদের ভালবাসার পাঠ দেওয়া দরকার।” গোসানিমারি নাগরিক মঞ্চের সহ সম্পাদক প্রদীপ ঝা বলেন,“ টিয়া পাখির ডেরা ওই বনের বড় আকর্ষণ। তা রক্ষায় কড়া ব্যবস্থা দরকার।”