এ বছর বর্ষার আগে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কোনও কাজই করেনি জিটিএ। এমনই অভিযোগ রাজ্যের সেচ দফতরের। তবে অভিযোগ নিয়ে রাজ্য-জিটিএ দোষারোপে না গিয়ে ওই এলাকাগুলিতে এখন কোনও কাজ করা সম্ভব কি না তার পথ খুঁজতে ব্যস্ত সেচ দফতর।
জুলাই পড়তে না পড়তেই বর্ষা পুরোপুরি ঢুকে পড়েছে উত্তরবঙ্গে। কিন্তু ফুটিফাটা বাঁধ, ধসে যাওয়া স্পার এবং অরক্ষিত নদীর পাড়ে মেরামতির জন্য একটি পাথরও পড়েনি। এই পরিস্থিতিতে নাগাড়ে বৃষ্টি হলে পাহাড়ি এলাকায় লিস-তিস্তা-র মতো নদীগুলি কতটা ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে তা নিয়েই আতঙ্কিত সকলেই। ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী, রাজ্যের বেশ কিছু দফতরের ভার জিটিএকে দেওয়া হয়েছে। জিটিএভুক্ত এলাকায় সেচের কাজ জিটিএ কর্তৃপক্ষই করে থাকেন। বন্যা প্রতিরোধের জন্য ফি বছর বর্ষার মাসখানেক আগে বিপজ্জনক নদী বাঁধ সংস্কার এবং পাড় বাঁধাইয়ের কাজ হয়।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, কোন কোন নদীর বাঁধ এবং পাড় মেরামত করতে হবে তার তালিকা আগেই রাজ্যের থেকে জিটিএকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ বছর সেই কাজের ছিটেফোঁটাও হয়নি বলে দাবি। মালবাজার লাগোয়া বাগরাকোটে লিস নদী বাঁধের প্রায় ১ কিলোমিটার অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে জানা গিয়েছে। সেই বাঁধের মেরামতির যে দ্রুত প্রয়োজন রয়েছে বিশেষভাবে তা জানিয়ে জিটিএকে চিঠিও দিয়েছিল সেচ দফতর। জানানো হয়েছিল, সেবক রেলগেট থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার তিস্তায় বাঁধ সংস্কার না হলে বর্ষায় সামাল দেওয়া যাবে না। কোনও চিঠিরই উত্তর আসেনি বলে দাবি। সংস্কারের কাজও হয়নি। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘জিটিএ-র এলাকা এখন আমাদের প্রধান উদ্বেগ এবং আতঙ্ক। দফতরের দায়িত্ব-বরাদ্দ সবই জিটিএকে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি নদীখাতে আমরা সমীক্ষা করে দেখেছি এ বছর বন্যা রোখার কোনও কাজ হয়নি। ভরা বর্ষায় কী হবে জানি না।’’
সেচ কর্তাদের দাবি, জিটিএ এলাকায় সেচ দফতর কোনও কাজ করাতে গেলে সেখানকার যুবকেরা বাধা দেয়। বছর তিনেক আগে ঠিকাদার সংস্থার কর্মীদের ওপর হামলাও হয়েছিল। তার পর থেকে সেচ দফতর সে ঝুঁকি নেয় না। এক কর্তার কথায়, ‘‘কাজ হয়নি, নাকি একটিও বোল্ডার না ফেলে পুরো কাজের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে কি না সেটাই প্রশ্ন।’’ আপাতত জিটিএ-এর মেয়াদ ফুরোনোর অপেক্ষায় রয়েছে দফতর। জিটিএতে প্রশাসক বসলে প্রয়োজন মতো কাজ করিয়ে নেওয়া যাবে। তবে মেয়াদ ফুরোতে এখনও মাসখানেক বাকি। ততদিন নাগাড়ে বৃষ্টি হলে নদীকে বেঁধে রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন সেচকর্মীরা। সে ক্ষেত্রে বন্যা হলেআপদকালীন পরিস্থিতি দেখিয়ে মেরামতি ছাড়া উপায় নেই।