অবাক: সেই চিঠি হাতে।নিজস্ব চিত্র
সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন জানিয়ে শুভেচ্ছার চিঠি পাঠিয়েছেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই করা চিঠি পেয়ে মাথায় হাত জলপাইগুড়ির নগর বেরুবাড়ির সতেরো জন বাসিন্দার। কেউ ছুটেছেন গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে কেউ বা থানায় অভিযোগ জানাবেন বলে ভাবছেন। কারণ তাঁদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি পেলেও কেউই বাড়ি পাননি। জলপাইগুড়ির নগর বেরুবাড়ি এলাকার ১৭ জন বাসিন্দার কাছে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে চিঠি এসেছে যদিও তাঁদের উঠোনে একটি ইটও গাঁথা হয়নি। চিঠি পেয়েছেন মশিয়ার রহমান। তাঁর কথায়, “চিঠি তো পেলাম। কিন্তু বাড়িটা গেল কোথায়?”
বিষয়টি জেনেই জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বিডিও তাপসী সাহা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিডিও বলেন, “নানা কারণে এমনটা হতে পারে। তদন্ত করে দেখছি।”
যাঁদের জমি আছে কিন্তু বাড়ি নেই গ্রামীণ এলাকায় এমন বাসিন্দাদের মাথায় ছাদ দিতে গীতাঞ্জলি প্রকল্প রয়েছে রাজ্য সরকারের। এই প্রকল্পে বাসিন্দাদের বাড়ি তৈরির জন্য দুই কিস্তিতে ৭০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। সম্প্রতি, সরকারি তালিকা অনুযায়ী যাঁরা টাকা পেয়েছেন তাঁদের মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাপত্র পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। জলপাইগুড়িতে সেই চিঠি বিলি হতে শুরু করাতেই অনিয়মের অভিযোগ সামনে চলে এসেছে বলে দাবি। নগর বেরুবাড়ির বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, টাকা না দিয়েই সরকারি প্রকল্পে তাঁরা বাড়ি পেয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে।
যে সতেরো জনের নামে বাড়ি পাওয়ার চিঠি এসেছে অথচ তাঁরা প্রকল্পের টাকা পাননি বলে অভিযোগ, তাঁদের নামের প্রস্তাব করেছিলেন জলপাইগুড়ির কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা. নিয়ম অনুযাযী সেই প্রস্তাব জমা পড়ে বিডিও অফিসে। আবেদনকারীর যোগ্যতা বিচার করে অনুমোদন দেয় রাজ্য সরকার। উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পৌঁছে যায়। বাড়ি তৈরি হল কিনা তা নজরদারি চালায় স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত। বিজেপির প্রধান শম্পা রায় বর্মণের কথায়, “বিষয়টি শুনেছি। এই প্রকল্পে গ্রাম পঞ্চায়েতের উপরে শুধু তদারকির ভার রয়েছে। তবে আমরাও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।”
নগর বেরুবাড়ির কালান্দি পাড়ার মশিয়ার রহমান, সরকার পাড়ার করুণা রায়, চা শ্রমিক পবন সরকারদের কারও এক কাঠা আবার কারও কয়েক ছটাক জমি রয়েছে। যাতে একটা কংক্রিটের বাড়ি তৈরি হতে পারে। করুণা রায় বললেন, “এক বছর ধরে বাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। আজকে চিঠি পেয়ে জানলাম বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। আমি তো পাইনি। তাহলে টাকাটা গেল কোথায়?” এলাকার বাসিন্দা লতিবর রহমানের কথায়, “আমাদের আশঙ্কা, টাকা বরাদ্দ হওয়ার পরে তা অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর তদন্ত হোক।”