ভোগান্তি: কাঁটাতারের ওপারের ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে ধান কেটে নিয়ে আসছেন কৃষক। তপন সীমান্তে। ছবি: অমিত মোহান্ত
কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে বন্দি হয়ে ভারতীয় ভূখণ্ডের বাসিন্দারা আজও পরবাসী হয়েই দিন কাটাচ্ছেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি, বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর ও কুমারগঞ্জ ব্লকের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ায় ঘেরা নাগরিকদের দেশভাগের রেশ আজও এভাবেই প্রতিনিয়ত বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। সীমান্তের গেটে বিএসএফের শাসনের উপরেই তাঁদের জীবন যাপন নির্ভরশীল।
বছর চারেক আগে ওই সমস্ত বাসিন্দাদের এপারে দেশের মূল ভূখণ্ডে স্থানান্তরের উদ্দেশে জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় জমি চিহ্নিত করতে উদ্যোগী হয় ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফেও রাজ্যের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে দ্রুত ওই পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছিল। প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে সীমান্তরক্ষী বাহিনী কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে বাংলাদেশের দিকে উন্মুক্ত এই রাজ্যের ১৪২টি গ্রামকে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের কাছে তালিকা পাঠিয়েছিল। জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালে কাঁটাতারের বেড়ার এপারে জমি খুঁজতে উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। তারপরে কাজ এগোয়নি।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, প্রয়োজনে সীমান্তের ওই সমস্ত এলাকা থেকে দু’কিলোমিটারের মধ্যে জমি খুঁজে বাসিন্দাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে কেন্দ্র থেকে বলা হয়। সে সময় বেড়ার ওপারের ভূমিহীন বাসিন্দাদের জন্য রাজ্য সরকারের নিজগৃহ নিজভূমি প্রকল্পের অধীনে এপারে বাড়ি তৈরি করে দিতে উদ্যোগী হয়। ওই কর্মসূচি কার্যকর করতে কাঁটাতারের বেড়ার এপারে কতটা জমি প্রয়োজন তা খতিয়ে দেখার কাজ হয়নি। অতিরিক্ত জেলাশাসক মৃন্ময় বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বিএসএফ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়। কী পরিস্থিতি রয়েছে খোঁজ নেওয়া হবে।’’
দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে ২০টি, বালুরঘাট সীমান্তে ৩টি, গঙ্গারামপুরে ২টি এবং কুমারগঞ্জে ১টি গ্রামের বাসিন্দাদের কাঁটাতারের ওপারে বসবাস। ওপারে উজাল, হাড়িপুকুর, হিন্দু মিশনপাড়া, উত্তর আগরার মতো গ্রামগুলোতে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ ঘর লোকের বাস। অভিযোগ, নির্বাচনের সময় ভোট দেওয়া থেকে কেনাকাটা, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষিপণ্য বিক্রি সব কাজের জন্যই সীমান্তের গেট হয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে এপারে আসতে হয়। সরকারি নিয়মে, সন্ধ্যা ৬টার পরে গেট বন্ধ হয়ে যাবে। তার আগে না ফিরতে পারলে বাড়ি ফেরা বন্ধ। সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ১২ ঘন্টা ওই এলাকার বাসিন্দারা মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রাতবিরেতে কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে দুর্ভোগ পোহতে হয় পরদিন সকালে গেট না খোলা পর্যন্ত।
আবার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওপারের দুষ্কৃতীরা ফসল কেটে, গবাদিপশু লুট করে নিয়ে যায়। দেশের সরকারের তৎপর হোক, এমনই দাবি বাসিন্দারা।