স্তব্ধ পাহাড়, তাই মন খারাপ ডুয়ার্সেরও

জুন থেকে শুরু হল পাহাড়ে গণ্ডগোল। দিনের পর দিন যায়, কিন্তু ঝামেলা আর মেটে না। সবসময় রাজনীতির খবর এড়িয়ে চলা ঘোষবাবুও তাগিদে পড়ে চোখ রাখছিলেন খবরের কাগজের পাতায়। শেষমেষ গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো যখন বন্যা উত্তরবঙ্গ ভাসিয়ে দিল।

Advertisement

অভিরূপ দত্ত

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:২৩
Share:

পুজো এলেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে ‘চেঞ্জে’ যাওয়া বাঁধা ঘোষবাবুর। তার জন্য দু’মাস আগে থাকতেই ছুটি জোগাড় করে রাখেন তিনি। এবার গিন্নির পছন্দ মেনে দার্জিলিঙে যাবেন। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু বিধি বাম।

Advertisement

জুন থেকে শুরু হল পাহাড়ে গণ্ডগোল। দিনের পর দিন যায়, কিন্তু ঝামেলা আর মেটে না। সবসময় রাজনীতির খবর এড়িয়ে চলা ঘোষবাবুও তাগিদে পড়ে চোখ রাখছিলেন খবরের কাগজের পাতায়। শেষমেষ গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো যখন বন্যা উত্তরবঙ্গ ভাসিয়ে দিল। তখন যারপরনাই ভেঙে পড়েছিলেন ঘোষ গিন্নি। বাধ্য হয়ে সিমলার টিকিট কাটেন তাঁরা।

একই ঘটনার সাক্ষী শুভঙ্কর বসাকও। তিনি সস্ত্রীক বাইরে থাকেন। প্রতি পুজোতেই বাড়ি ফিরে বাবা, মা কে নিয়ে ঘুরতে যান তিনি। দার্জিলিঙে পাঁচতারা হোটেল বুক করা ছিল। ট্রেন বন্ধ থাকলেও বিমানে যাওয়ার রেস্ত তাঁর রয়েছে। কিন্তু পাহাড়ে অশান্তির কারণে সব বাতিল করলেন তাঁরা।

Advertisement

এত গেল মুদ্রার একপিঠ। অন্যপিঠে রয়েছেন পাহাড় ও ডুয়ার্সের বাসিন্দারা। তাদেরও রয়েছে স্বপ্ন ভাঙার যন্ত্রণা। যার মাত্রাটা হয়তো আরও বেশি।

পুজোর সময় প্রচুর টাকার ব্যবসা হয় তাঁদের। হোটেল মালিক-কর্মী, গাড়ির চালক থেকে শুরু করে রাস্তার ধারের হোটেল সবাই এই সময়ে দু’টো পয়সার মুখ দেখে। কিন্তু পাহাড়ে সমস্যা ও তারপর উত্তরের বন্যায় ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাথায় পাহাড় ভেঙেছে তাঁদের। নতুন বুকিং তো দূরের কথা। যা ছিল তাও বাতিল হয়ে গিয়েছে। মহালয়ার পরেও ভিড় নেই ডুয়ার্সের রিসর্টগুলোয়। লাটাগুড়ি মোড়়ের একটি দোকানে চা খাচ্ছিলেন স্থানীয় একটি রিসর্টের ম্যানেজার। কথায় কথায় বললেন, ‘‘জঙ্গল খুলেছে। অন্য বছরে এই সময়ে নিঃশ্বাস নেওয়ার সময়ে পাওয়া যেত না।’’

লাটাগুড়িতেই রয়েছে গরুমারা, কলাখাওয়া জঙ্গল সাফারির আলাদা কাউন্টার। জঙ্গল খুললে ভোর থেকেই সাফারির টিকিটের জন্য লাইন পড়ে যায়। এবারে বিশ্বকর্মা পুজোর পরদিন দেখা গেল গোটাকয়েক টিকিট বিক্রি হয়েছে সকাল পর্যন্ত। ফরেস্ট গাইড রাধাকান্ত রায়ের চোখেমুখে হতাশা। বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম গমগম করবে। এখন বসে থেকে মাজায় ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে।’’

বাজার খারাপ বলে গাড়িচালকরাও অনেকসময় কমিয়ে দিচ্ছেন ভাড়া। লাটাগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি বাস টার্মিনাসের ভাড়া পড়ে হাজার দু’য়েক টাকা। ১৮ সেপ্টেম্বর একটু দরাদরি করতেই তা নেমে এল আঠারোশো টাকায়। লাটাগুড়ি এলাকায় টোটো চালান ইন্দ্রজিৎ বসাক। পর্যটকদের নিয়ে নেওড়া ভ্যালি চা বাগান, নেওড়া নদীর পাড়ে ঘোরাতে নিয়ে যান তিনি। লোক হচ্ছে না বলে তাঁরও পুজোর বাজারও জমেনি। সম্প্রতি কলকাতা-এনজেপি ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এবার আশা দেখছেন কি? উত্তরে মাথা নাড়েন ইন্দ্রজিৎ। ট্রেন শুরুর কদিন পরেও পর্যটকদের বিশেষ ভিড় হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

মন খারাপ কাঞ্চনজঙ্ঘারও। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন গরুমারার রাইনো পয়েন্ট থেকে দেখা গিয়েছিল তাকে। কিন্তু দেখার জন্য ছিল মাত্র জনাসাতেক লোক।

যাকে দেখার জন্য প্রতি বছর এত বাঙালি হাঁকপাক করে। এই পুজোয় তাঁদের না দেখে হয়তো মন খারাপ হয় কাঞ্চনজঙ্ঘারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন