মাতৃযান-এসএনসিইউ, খুশি দক্ষিণ দিনাজপুর

মাতৃযান ছিল বলেই সময় মতো অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী’কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন গঙ্গারামপুরের কাটাবাড়ি এলাকার হোসেনপুর গ্রামের কৃষিমজুর মহিদুর রহমান কিংবা তপনের পার্বতীপুরের নুরুল ইসলাম বা কুশমণ্ডির পিছলাপাড়া এলাকার ছোট ব্যবসায়ী মোকারাম হোসেন।

Advertisement

অনুপরতন মোহান্ত

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০২:৩৩
Share:

মাতৃযান ছিল বলেই সময় মতো অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী’কে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন গঙ্গারামপুরের কাটাবাড়ি এলাকার হোসেনপুর গ্রামের কৃষিমজুর মহিদুর রহমান কিংবা তপনের পার্বতীপুরের নুরুল ইসলাম বা কুশমণ্ডির পিছলাপাড়া এলাকার ছোট ব্যবসায়ী মোকারাম হোসেন। মোকারাম বলেন, ‘‘গঙ্গারামপুর হাসপাতাল থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার। যোগাযোগ করে মাতৃযানের গাড়ি পেলাম বলেই সময় মতো স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পেরেছি।’’ মাতৃযানেই সদ্যোজান সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন তিনি।

Advertisement

বালুরঘাটের ভাটপাড়া গ্রামপঞ্চায়েতের শিরামপুর গ্রামের প্রসূতি জয়াপ্রদা হেমব্রমও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় খুশি। তাঁর সন্তানের ওজন ছিল মাত্র ৭৫০ গ্রাম। বালুরঘাট হাসপাতালে এসএনসিইউ ওয়ার্ড থাকায় সমস্যা হয়নি। ২০১২ সালের শুরুতে বালুরঘাটে এসএনসিইউ চালু হয়ে যায়। তারপর থেকে চাষি পরিবারের বধূ জয়াপ্রদার সন্তানের মতো একাধিক কম ওজনের শিশু উন্নত চিকিতসা পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠছে। তাতে শিশু মৃত্যুর হার কমেছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকাই নয়, সড়ক দুর্ঘটনাপ্রবণ দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে কোনও দিন সিটি স্ক্যান যন্ত্র বসবে সাধারণ মানুষ ভাবতে পারেননি। দুর্ঘটনায় আহত রোগীর মাথার ছবি করাতে এই প্রান্তিক জেলার মানুষকে নিকটবর্তী ১১০ কিলোমিটার দূরের মালদহ জেলার বেসরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হত। বর্তমানে ছোটাছুটির ধকল শেষ হয়েছে। গত এক বছরের মধ্যে বালুরঘাট হাসপাতালে কেবল সিটিস্ক্যান পরিষেবাই নয়—সাধারণ গরিব রোগীরা কিডনি ও সুগারের মতো অসুখের চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ পাচ্ছেন। হাসপাতালে এসএনসিইউ, পুষ্টি নিবারণ কেন্দ্র, ডায়ালিসিস ইউনিট থেকে ডায়াবেটিস এবং কেমোথেরাপি ইউনিট চালু হয়েছে। তবে অঙ্কোলজিস্টের অভাবে ক্যানসার চিকিৎসা হচ্ছে না।

হোমিওপ্যাথি বিভাগেও রোগীর ভিড় বাড়ছে। পিপিপি মডেলে চালু বালুরঘাট হাসপাতালে মাত্র ৫০০ টাকায় সিটিস্ক্যান করানোর সুযোগ মিলছে। বিপিএলভুক্তরা আরও কম টাকায় ওই পরিষেবা পাচ্ছেন। বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল এবং গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতাল চত্বরের দোকান থেকেই সস্তার ওষুধ কিনতে পারছেন রোগীর আত্মীয়রা। বালুরঘাট হাসপাতালের তিন তলায় চালু রোগীদের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তির সুবিধার জন্য গত বছর ‘লিফ্ট’ তৈরির হয়েছে। কিন্তু ৪০০ শয্যার বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের ওই পরিষেবাগুলো ঠিকঠাক চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি এক শ্রেণীর চিকিৎসকের বহির্বিভাগে রোগীদের বসিয়ে রেখে বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার মতো কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগও জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে পৌঁছেছে। বালুরঘাট হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোজ গড়ে ৪০০ উপর রোগী ডাক্তার দেখাতে লাইন দিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা করে থাকেন।

Advertisement

বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে জিডিএমও (জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার)-এর প্রয়োজন ১৫ জন। রয়েছেন মাত্র ৫ জন। অ্যানাসথেটিস্টের বরাদ্দ পদ ৪ জন হলেও বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ১ জন। শল্য চিকিৎসক ৪ জনের মধ্যে মাত্র ২ জন কোনও মতে সামলাচ্ছেন। কখনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসক তুলে এনে জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা সামাল দিতে গিয়ে গ্রামীণ হাসপাতালের পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।

সব মিলিয়ে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে ৪২ জন চিকিৎসক এবং তিন শিফ্টে গড়ে প্রায় ৫০ জন করে ডিউটিরত প্রায় ১৬০ জন নার্সের মাধ্যমে জেলা হাসপাতালের পরিষেবা সামাল দেওয়ার পথে নতুন করে গড়ে ওঠা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালু নিয়ে বেজায় বিপাকে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন