কলকাতা থেকে দিল্লি, ‘ভায়া’ উত্তরবঙ্গ। দত্তকের নামে শিশু পাচারের জাল এ ভাবে ছড়িয়ে আছে বলেই অনুমান সিআইডি-র।
সিআইডি সূত্রের খবর, গত বৃহস্পতিবার জুহি চৌধুরীকে গ্রেফতারের পর থেকে তাঁর মোবাইলগুলি খুঁজে দেখছিলেন গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, জুহির মোবাইলের কল রেকর্ড থেকে মিলেছে একাধিক প্রভাবশালীর নাম। তাতে দিল্লির এক নেতা ও এক সাংসদের নাম রয়েছে। একই সঙ্গে মিলেছে দত্তক সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সংস্থা কারা-র আধিকারিকের নম্বরও। সিআইডি-র দাবি, ওই আধিকারিকের মাধ্যমে জলপাইগুড়ির হোমের যাবতীয় অনিয়ম চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকে পাওয়া সূত্র ধরেই পাচারের তদন্ত শুরু করেছিল রাজ্য। এখন গোয়েন্দাদের দাবি, দিল্লিতেও জাল ছড়িয়েছে। জুহিকে গ্রেফতারের পরে সেই মামলায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায় এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের নাম জুড়ে দিয়েছে সিআইডি। যে ঘটনায় ক্ষুব্ধ রাজ্য বিজেপি এখন বলছে, এর পিছনে তৃণমূলের চক্রান্ত রয়েছে।
দিল্লিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বাড়বাড়ন্তে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী। তাই কখনও বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কখনও সাংসদ রূপার নামে মিথ্যে অভিযোগ আনছে মমতার পুলিশ।’’ একই ভাবে কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক করে দিলীপ ঘোষও ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ আনেন। বলেন, ‘‘চন্দনা চক্রবর্তী, তাঁর ভাই মানস ভৌমিক তো তৃণমূলেরই লোক। তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় একাধিক তৃণমূল নেতার যোগাযোগ ছিল। সেই নেতাদের তো জেরা করা হচ্ছে না!’’ একই অভিযোগ তুলেই জুহি চৌধুরীর পাশে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘জুহির মতো নেত্রীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।’’
বিজেপি-র এই ক্ষোভের মধ্যেই সিআইডি জানিয়ে দিয়েছে, দিল্লির আধিকারিকদের জেরায় ডাকা হবে, নাকি তাঁরা দিল্লি যাবেন— তা নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পাচার কাণ্ডে ধরপাকড় কিন্তু অব্যাহত। এ দিন পিনটেল ভিজেলে দীর্ঘ জেরার পরে গ্রেফতার করা হয় দার্জিলিঙের জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক মৃণাল ঘোষকে। তদন্তে এই প্রথম কোনও সরকারি আধিকারিককে গ্রেফতার করা হল। মৃণালের স্ত্রী সাস্মিতা ঘোষ জলপাইগুড়ির শিশু সুরক্ষা আধিকারিক। তাঁকেও দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয়। পাচার কাণ্ডে তদন্ত শুরু করেই সিআইডি সাস্মিতাকে শো-কজ ও পরে সাসপেন্ড করে।