জরিমানার পরেও কানে সেই মোবাইল

কড়াকড়ি করা হচ্ছে চোখে পড়লেই। কিন্তু তাতেই বা কী? তারপরেও রাস্তায় প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, কোনও না কোনও গাড়ির চালক কানে ফোন দিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। আনন্দবাজারের নজর পড়ল সেখানেই।শিলিগুড়িতে শুধু ডিসেম্বরেই গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলার জন্য ১৭ জনের লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়েছে। ২৫৬ জন বাইক আরোহীকে জরিমানা করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৫
Share:

কানেকানে: সওয়ারি, চালক দু’জনেরই কানে ফোন। জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল

লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত

Advertisement

শিলিগুড়িতে শুধু ডিসেম্বরেই গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলার জন্য ১৭ জনের লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়েছে। ২৫৬ জন বাইক আরোহীকে জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু জরিমানা মাত্র ১০০ টাকা হওয়ায় একশ্রেণির বাইক চালক বেপরোয়া বলে মত ট্রাফিক পুলিশের। শিলিগুড়ি ট্রাফিক পুলিশের ডিসি সুনীলকুমার যাদব বলেন, ‘‘গাড়ি-বাইক চালানোর সময়ে মোবাইল ব্যবহার কতটা বিপজ্জনক তা সকলেই জানেন ও বোঝেন। তবুও আইন ভাঙেন। এই প্রবণতা আটকাতে জরিমানার সঙ্গে লাইসেন্স সাসপেন্ড করা শুরু হয়েছে।’’ ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, একাধিকবার লাইসেন্স সাসপেন্ড হলে তা বাতিলের সুপারিশ করা হতে পারে।

সাসপেন্ডেও জোর

Advertisement

বেলা তখন সাড়ে এগারোটা৷ জলপাইগুড়ির বেগুনটারি মোড় সংলগ্ন এলাকায় ব্যস্ততা তুঙ্গে৷ যান নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশদের৷ এমনই সময় মাসকলাইবাড়ির দিক থেকে একটি মোটর সাইকেলকে দেখতে পেলেন পুলিশকর্মীরা৷ চালাচ্ছেন এক যুবক৷ পিছনে এক যুবতী৷ যুবকের মাথায় হেলমেট৷ তাতে গোঁজা ফোন৷ বাইক দাঁড় করালেন পুলিশকর্মীরা৷ এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘না চাইতেই পকেট থেকে লাইসেন্স বের করে আমাদের হাতে তুলে দেন ওই যুবক। তখনও ফোনে কথাই বলে চলেছেন। তাঁকে ধমক দিয়ে ১০০ টাকা জরিমানা করতেই সম্বিত ফেরে তাঁর।’’ গত বছর মোবাইল ফোন কানে দিয়ে গাড়ি বা মোটর সাইকেল চালানোর ৪৩৬টি ঘটনায় পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছিল৷ এ বছর শুধু জানুয়ারি মাসে সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৫৫-তে৷ দু’জনের লাইসেন্স সাসপেন্ডও করা হয়েছে৷ নিয়ম ভঙ্গকারীদের লাইসেন্স বেশি করে সাসপেন্ড করার চিন্তাও চলছে। কোচবিহারে দুদিনে ৭০ জনকে জরিমানা করা হয়েছে। মোবাইলে কথা বলার জন্য।

নির্দেশিকা এনবিএসটিসির

উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার কোচবিহারের সদর দফতর থেকে নির্দেশিকা জারি হয়েছে বুধবার। তাতে লেখা হয়েছে, গাড়ি চালানোর সময়ে চালকদের মোবাইলে কথা বলা নিষেধ। প্রয়োজনে গাড়ি চালানোর আগে চালকের মোবাইল কন্ডাক্টরের কাছে জমা দিতে হবে। গাড়ি থামার পরে আবার তিনি তা ফেরত পাবেন। গাড়ি চালানোর সময়ে তা ব্যবহার করলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এত দিনে কেন ওই নির্দেশ? ম্যানেজিং ডাইরেক্টর সুবলচন্দ্র রায় বলেন, “নির্দেশ আগেও ছিল, সেটাই মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

নজরদারি কম

মালদহ জেলার উপর দিয়ে চলে গিয়েছে ৩৪, ৮১, ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়ক। রাজ্য সড়কও রয়েছে কয়েকটি। প্রতিটি রাস্তাতেই কানে মোবাইল গুঁজে গাড়ি বা বাইক চালানো চলছেই। কিন্তু জরিমানার পরিমাণ মালদহ জেলাতে খুবই কম। ২০১৭ সালে মালদহ জেলা মাত্র ৩৭৩৫ জনের কাছ থেকে একশো টাকা করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, পুলিশ নজরদারি যদি জোরদার থাকত তবে এই জরিমানার পরিমাণ আরও বাড়ত।

চিৎকারে পালাল

তোর্সা সেতু দিয়ে বাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন ঘুঘুমারি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক গৌতম দত্ত। তিনি জানান, ঠিক সেই সময় মাথাভাঙা রোড থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী ছোট গাড়ি কোচবিহারের দিকে যাচ্ছিল। মোবাইল ফোনে গল্প করতে করতে চালক তোর্সা সেতুর উপরে গাড়ি এমন ভাবেই ডান দিকে চাপিয়ে দেন যে, আতঙ্ক তৈরি হয়। তিনি বলেন, “পথচলতি মানুষ চিৎকার করতেই পালিয়ে যায় ওই গাড়ি।” অভিযোগ, এমন দৃশ্য নিত্যদিন দেখা যায় কোচবিহারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন