গণধর্ষণে ধৃতদের হাজির করানো হচ্ছে জলপাইগুড়ি আদালতে।—নিজস্ব চিত্র।
নবম শ্রেণির পড়ুয়া এক ছাত্রীকে মাদক মেশানো খাবার খাইয়ে গণধর্ষণ করার অভিযোগে ৪ যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। রবিবার রাতে জলপাইগুড়ি শহরের করলা নদী সংলগ্ন পরিত্ত্যক্ত চিলড্রেন’স পার্কে ঘটনাটি ঘটে। ছাত্রীর পরিবারের তরফে সোমবার রাতে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ রাতেই গণধর্ষণে জড়িত সন্দেহে চার যুবককে গ্রেফতার করে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ‘প্রিভেনশন অব চাইল্ড সেক্সুয়াল অফেন্সের’ (পকসো) ৬ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাঁদের জেলা দায়রা আদালতে তোলা হলে বিচারক বুধবার পর্যন্ত তাদের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার অভিযুক্তদের বিশেষ আদালতে তোলা হবে। ধৃতদের অবশ্য দাবি, তাদের ফাঁসানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের মধ্যে দু’জন শহরের ক্লাব রোড এলাকার বাসিন্দা। বাকি দু’জনের বাড়ি করলা নদী লাগোয়া এলাকায়। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথন বলেন, “ছাত্রীটির ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ধৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।” এদিন অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে পুলিশের তরফে আদালতের কাছে আবেদন করা হয়নি। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, বৃহস্পতিবার বিশেষ আদালতে তোলা হলে সেখানে ওই আবেদন জানানো হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহর সংলগ্ন কোরানি পাড়ার বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্রীর মা পরিচারিকার কাজ করেন। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট। বাবা নেই। রবিবার তিস্তা উদ্যানে বেড়াতে গিয়ে ছাত্রীটি রাতে বাড়িতে ফিরে যায়নি। তাঁর মা জানান, রাতে অনেক খোঁজ করেও মেয়ের হদিস পাননি। সোমবার সকালে তিস্তা উদ্যানের কাছে নদী বাঁধে খোঁজ করার সময় দেখেন, মেয়ে একটি গাছের তলায় একা বসে আছে। তিনি বাড়িতে যেতে বললে সে জানায় তাঁর সর্বনাশ হয়েছে। আর বাড়িতে ফিরে যাবে না। মায়ের অভিযোগ, অনেক বুঝিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরে মেয়ে জানায়, চার জন ছেলে চপের সঙ্গে কিছু একটা খাইয়ে তাঁকে প্রথমে বেহুঁশ করে দেয়। পরে চোখ বেঁধে চিলড্রেন পার্কের ঝোপের আড়ালে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে ধর্ষণ করা হয় বলে ছাত্রীর অভিযোগ। অভিযুক্তদের নাম ছাত্রীটি তাঁর মাকে জানিয়ে দেয়। এর পরে রাতে ছেলেদের নাম উল্লেখ করে মা কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারের পরে নির্যাতিতা ছাত্রী অভিযুক্তদের শনাক্ত করে জানায়, ওই যুবকদের সঙ্গে তাঁর কোনও পরিচিতি ছিল না। ওই যুবকেরা জোর করে তাঁকে মাদক খাইয়ে অজ্ঞান করে ধর্ষণ করে। পুলিশ কর্তারা মঙ্গলবার সকালেও ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এদিকে অদালতে নেওয়ার পথে ধৃত চার যুবক কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছাত্রীর সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ধৃতরা জানান, তাঁদের চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে।