প্রতীকী ছবি।
ক্লাসঘরের যে বেঞ্চে পড়ুয়ারা বইখাতা রাখে, সেই বেঞ্চে সার করে রয়েছে মদের বোতল। কোনও বোতল খালি, আবার কোনও বোতলে কিছুটা মদ রয়ে গিয়েছে। মদের গন্ধে ভরে আছে গোটা ক্লাসঘর।
শুধু মদের বোতলই নয়, ক্লােসর মেঝেতে ইতিউতি ছড়িয়ে রয়েছে সিগারেট, গুটখার প্যাকেট, খাবারের উচ্ছিষ্ট। ক্লাসরুমের সুইচবোর্ডেরও দফারফা অবস্থা। বৃহস্পতিবার পুরাতন মালদহের সাহাপুর হাইস্কুলের পড়ুয়ারা গিয়ে একাধিক ক্লাসরুমেই দেখল এমন দৃশ্য। ক্লাস টিচারদেরও এ দিন এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে।
অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর মালদহ সফরে নিরাপত্তার জন্য আসা ভিন জেলার পুলিশ কর্মীরা স্কুলে থেকেই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হতে জেলার পুলিশ মহলে হইচই পড়ে। জানা গিয়েছে, স্কুলের তরফেও জেলা পুলিশকে জানানো হয়। বেলা একটা নাগাদ পুলিশের তরফে সাফাই কর্মী পাঠিয়ে ওই ক্লাসরুমগুলি পরিস্কার করে দেওয়া হয়। স্কুলের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশের এমন কাণ্ড নিয়ে জেলার শিক্ষা মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। স্কুলের দোতলার একাধিক ক্লাসঘরের এ হেন পরিস্থিতিতে শেষপর্যন্ত সেগুলিতে আর ক্লাস করা যায়নি। স্কুল সূত্রে খবর, এ দিন স্কুলে পড়ুয়া কম আসায় নীচতলার ক্লাসরুমগুলিতে তিনটি সেকশনের পড়ুয়াদের একসঙ্গে বসিয়ে ক্লাস করানো হয়েছে।
মালদহে মুখ্যমন্ত্রীর সভা ছিল ২০ ফেব্রুয়ারি। এই সফরকে ঘিরে নিরাপত্তার জন্য জেলার তো বটেই, ভিন জেলা থেকে প্রচুর পুলিশ কর্মী আনা হয়েছিল। ওই স্কুলেও বেশ কিছু পুলিশের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ জন্য ১৮ তারিখ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত স্কুল ছুটিও ছিল। বুধবার রাতে পুলিশকর্মীরা স্কুল ছেড়ে চলে যান। তিনদিন পর স্কুল খোলায় এ দিন ছাত্ররা স্কুলে আসে। দোতলায় যেসব ঘরে পুলিশ ছিল সেখানে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ক্লাস হয়। এ দিন ঘরে ঢুকেই পড়ুয়াদের নজরে পড়ে ক্লাসের এই অবস্থা।
একাধিক পড়ুয়া বলে, ‘‘কিছু মদের বোতল খালি হলেও কয়েকটিতে মদ ছিল। ক্লাসে গন্ধে টেকা দায় হয়ে যায়। আমরাই শিক্ষকদের জানাই।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘‘ক্লাস নিতে গিয়ে দেখি বেঞ্চে মদের বোতল। প্রধান শিক্ষককে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে পড়ুয়াদের নীচতলায় নিয়ে এসে ক্লাস করানো হয়েছে।’’ প্রধানশিক্ষক কিশোর বণিক বলেন, ‘‘আমি স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতিকে বিষয়টি জানিয়েছি। স্কুলে এর আগেও রাজ্য পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর পুলিশদের রাখা হত। কিন্তু এমন ঘটনা কোনওবারই ঘটেনি।’’
ঘটনা জানার পর বিষয়টি জেলা পুলিশকে জানান পরিচালন সমিতির সভাপতি জয়ন্ত সুকুল। তারপরেই সাফাইকর্মী এনে স্কুল সাফ করে দিয়েছে পুলিশ। তবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন কাণ্ড ঘটানোর অভিযোগে জেলা পুলিশ মহলে হইচই পড়ে। পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) তাপস বিশ্বাস বলেন, ঘটনা শুনেছি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।