মানিক সান্যাল আটক আট ঘণ্টা, ক্ষোভ

তাঁর বয়স ৮৩ বছর। ডান-বাম নির্বিশেষে জলপাইগুড়ির সব মহলেই তাঁর পরিবারের অবদান এখনও চার্চার বিষয়। নানা বিতর্ক থাকলেও চা বলয়ে ওই বামপন্থী নেতার গ্রহণযোগ্যতা এখনও রাজনীতিক দুনিয়ায় সম্ভ্রমে আলোচনা হয়। সেই অশীতিপর নেতা মানিক সান্যালকে বনধ-এ পিকেটিংয়ের অভিযোগে ৮ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখায় নানা মহলে ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। শহর ও জেলার বিশিষ্ট জনদের মধ্যেও নানা ক্ষোভ দানা বাঁধছে।

Advertisement

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৪:৪৪
Share:

থানায় মানিক সান্যাল। —নিজস্ব চিত্র।

তাঁর বয়স ৮৩ বছর। ডান-বাম নির্বিশেষে জলপাইগুড়ির সব মহলেই তাঁর পরিবারের অবদান এখনও চার্চার বিষয়। নানা বিতর্ক থাকলেও চা বলয়ে ওই বামপন্থী নেতার গ্রহণযোগ্যতা এখনও রাজনীতিক দুনিয়ায় সম্ভ্রমে আলোচনা হয়। সেই অশীতিপর নেতা মানিক সান্যালকে বনধ-এ পিকেটিংয়ের অভিযোগে ৮ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখায় নানা মহলে ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। শহর ও জেলার বিশিষ্ট জনদের মধ্যেও নানা ক্ষোভ দানা বাঁধছে।

Advertisement

বয়সের ভারে মানিকবাবু অনেকটাই কাবু। ক্ষীণ হয়েছে শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তি। সকাল সাড়ে আটটায় চা বিস্কুট সহ হাল্কা খাবার, ওষুধ খেয়ে কামারপাড়ার বাড়ি থেকে সোজা ডিবিসি রোডে দলীয় দফতরে। সেখানে জানতে পারেন দলের জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য গ্রেফতার হয়েছেন। সময় নষ্ট না করে সটান থানায়। ধৃত দলীয় কর্মী ও নেতাদের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলে নিজেই শেষে রাস্তায় নামেন। সলিলবাবু বলেন, “উনি থানায় এসেছিলেন দেখা করতে। বলেছি সবাই ঠিক আছে। কোন এক ফাঁকে থানা থেকে বার হয়ে নিজে পিকেটিংয়ে সামিল হয়ে যান। পরে থানায় ফের দেখা হল।”

সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ মানিকবাবুকে পুলিশ আটক করে। ততক্ষণে কোতোয়ালি থানা প্রবীণ বাম নেতা এবং কর্মীতে ভরা। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ফরওয়ার্ড ব্লক জেলা সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, সিপিআই জেলা সম্পাদক রণগোপাল ভট্টাচার্য, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ মিনতি সেন ও জিতেন দাস। মানিকবাবুকে নিয়ে পুলিশের জিপ পৌঁছতে স্লোগানে গমগম করতে থাকে থানা চত্বর। এর মধ্যে ২৫ জন মহিলা বামকর্মীকে গ্রেফতার করে থানায় আনা হয়। মানিকবাবুদের জন্য একটি ঘর ছেড়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

কিন্তু, পুলিশের একাংশেই তা নিয়ে উদ্বেগ ছড়ায়। কারণ, নানা রোগের জন্য মানিকবাবু নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। কয়েকজন পুলিশকর্মী তাঁকে চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করানোর জন্য উদ্যোগী হলেও বাধা দেন অন্য অংশ। শাসক দলের কয়েকজন প্রবীণ নেতা বিষয়টি শুনে মানিকবাবুর শারীরিক সমস্যা যাতে না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু, শাসক দলের নেতাদের একাংশের রোষের মুখে পড়ার আশঙ্কায় কেউ এগোননি বলে পুলিশ সূত্রের খবর। অবশেষে বেলা পৌনে ৫টা নাগাদ মানিকবাবুদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

প্রবীণ বাম নেতাদের গ্রেফতার করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা থানায় আটকে রাখার খবর চাউর হতে থানা চত্বরে ভিড় বাড়তে শুরু করে। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে, মানিকবাবুর মতো অশীতিপর প্রবীণ নেতাকে কেন পুলিশ গ্রেফতার করে এত সময় আটকে রাখল? তিনি কী খুবই সমস্যায় ফেলতে পারতেন পুলিশকে, যে দিনভর আটকে রাখতে হল। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “মানিকবাবু বলে নয় প্রত্যেককে পিকেটার হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে।” আর জেলা পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথন জানান, পিকেটিং করে বাস থামানো, অফিস খুলতে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগে ১৩০ জনকে গ্রেফতার করে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।

যদিও মানিকবাবু তাঁর গ্রেফতারের ঘটনাকে বড় করে দেখছেন না। তাঁর কথায়, “বয়স কিছু নয়। রাজ্যে গণতন্ত্র আক্রান্ত। আমার নাতনি অথবা ছেলের উপরে আক্রমণ হলে চুপ করে বসে থাকতাম! পথে নেমেছি। তাই গ্রেফতার হতে হবে।”

কিন্তু প্রবীণ সিপিএম নেতার এখনও অদম্য সাহস দেখে অবাক জেলা বিজেপি সম্পাদক বাপি গোস্বামী। এদিন ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করার অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তিনি বলেন, “আদর্শগত বিস্তর ফারাক থাকলেও তাঁর মনোবলকে স্যালুট না জানিয়ে পারছি না।” যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব মানিকবাবুর পিকেটিং করা ও গ্রেফতারের ঘটনাকে চমক দেওয়ার চেষ্টা মনে করছেন। দলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “উনি মনে করেছেন শিলিগুড়ির অশোকবাবুর মতো চমক দিয়ে অক্সিজেন ফিরে পাবেন। সেটা জলপাইগুড়ি জেলায় হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন