আরও এক কার্বাইনের খোঁজে পুলিশ

পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই নেতা বর্তমানে একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন। ইতিমধ্যেই পুলিশের একটি বিশেষ দল ওই নেতার উপরে নজরদারি শুরু করেছে।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:০০
Share:

স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র কার্বাইন। ছবি: সংগৃহীত।

তৃণমূল নেতার কাছ থেকে কার্বাইন উদ্ধার হতেই শোরগোল পড়েছে জেলায়। তবে এতেই শেষ নয়। আরও একটি ‘কার্বাইন’ হাতে তৃণমূলেরই এক নেতা সীমান্ত এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই নেতা বর্তমানে একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের দায়িত্বে রয়েছেন। ইতিমধ্যেই পুলিশের একটি বিশেষ দল ওই নেতার উপরে নজরদারি শুরু করেছে। দিন দুয়েক আগেই নরেশ দেবনাথ নামে দিনহাটার বড় আটিয়াবাড়ির তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কার্বাইন হাতে ফেসবুকে তাঁর ছবি বেরনোর পর থেকে তিনি মাসখানেক পলাতক ছিলেন। তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় কার্বাইনটি। বর্তমানে নরেশবাবু পুলিশ হেফাজতে। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক তথ্য মিলেছে। শুধু তাই নয়, আরও কার কার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে সে সম্পর্কেও বেশ কিছু তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিশ।

পুলিশের তদন্তকারী দল অবশ্য তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে কারও নাম সামনে আনতে চায় না। পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের কাজ চলছে। দিনহাটায় একটি বিশেষ দল ওই কাজ করছে। ইতিমধ্যে ৫০ টির বেশি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।” সেই সঙ্গে পুলিশের অফিসাররা জানিয়েছেন, নরেশ দেবনাথ গ্রেফতার হওয়ার পরে অনেকেই নিজেদের আড়াল করতে তৎপর। কিন্তু কেউই যাতে গা ঢাকা দিতে না পারে সেদিকে নজর রাখছেন তাঁরা। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “আরেকজনের নাম আমরা পেয়েছি যার কাছে কার্বাইন রয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। তাঁর গতিবিধির উপরে নজরে রাখা হচ্ছে।”

Advertisement

পুলিশ তদন্ত আরও জানতে পেরেছে, তৃণমূলের ওই নেতার কাছে প্রায় একবছর ধরে ওই কার্বাইন রয়েছে। তা একাধিক বাসিন্দার নজরেও পড়েছে। তবে কোনও গণ্ডগোলে এখনও পর্য়ন্ত তা ব্যবহার করা হয়নি। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রচুর পরিমাণ তথ্য হাতে এসেছে। কারা কোথায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করেছে তেমন তথ্য পাওয়া গিয়েছে। শীঘ্রই অভিযান শুরু হবে।”

তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মাস দুয়েক আগে থেকেই প্রচুর পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকতে শুরু করে জেলায়। এর একটি বড় অংশ চলে যায় দিনহাটায়। এই অস্ত্র মজুতের পিছনে দু’রকম কারণ কাজ করেছে বলে দাবি পুলিশের। একদিকে সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারের নিয়ন্ত্রণ। অন্যদিকে পঞ্চায়েত নিজেদের দখলে এনে রাজনৈতিক ক্ষমতা বাড়িয়ে নেওয়া। বিরোধীদের অভিযোগ, সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারীদের একটি বড় অংশ শাসকদলের ছত্রছায়ায় রয়েছে। সে জন্যেই পুলিশ কাউকে গ্রেফতার বা অস্ত্র উদ্ধারে সক্রিয় হয়নি।

পুলিশের সন্দেহ, আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারের সঙ্গে বেশ কয়েকজন জড়িয়ে রয়েছে জেলায়। তাদের একদিকে যেমন মুঙ্গেরে যোগাযোগ রয়েছে, তেমনই অসমের অস্ত্র কারবারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। অসম থেকেই একটু বেশি দাম দিয়ে আলফা জঙ্গিদের ব্যবহার করা কার্বাইন বিক্রি করা হয় দিনহাটায়। এ ছাড়াও প্রচুর পরিমাণ নাইনএমএম এবং সেভেন পয়েন্ট সিক্সএমএম পিস্তল রয়েছে জেলায়। তৃণমূলের সিতাই কেন্দ্রের বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া বলেন, “আমরা তো দফায় দফায় আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার নিয়ে পুলিশের কাছে দরবার করেছি। যার কাছেই অস্ত্র থাক কেন তা উদ্ধার করা হোক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন