মানবাধিকার লঙ্ঘনে ব্যবস্থা পুলিশের বিরুদ্ধেও

উত্তরবঙ্গের দু’টি থানার একাধিক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দু’টি পৃথক অভিযোগ উঠেছিল ২০১৪ সালে। প্রায় এক বছর ধরে তদন্তের পরে দু’টি ঘটনায় অভিযুক্ত ৩ পুলিশ অফিসারের জরিমানার সুপারিশ করেছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। জরিমানার টাকা ওই অফিসারদের মাইনে থেকে কেটে নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে কমিশন। সরকারি সূত্রের খবর, কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নপরাজিত মুখোপাধ্যায় ওই পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন কর্তৃপক্ষকে।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:০০
Share:

উত্তরবঙ্গের দু’টি থানার একাধিক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দু’টি পৃথক অভিযোগ উঠেছিল ২০১৪ সালে। প্রায় এক বছর ধরে তদন্তের পরে দু’টি ঘটনায় অভিযুক্ত ৩ পুলিশ অফিসারের জরিমানার সুপারিশ করেছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। জরিমানার টাকা ওই অফিসারদের মাইনে থেকে কেটে নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে কমিশন।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নপরাজিত মুখোপাধ্যায় ওই পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন কর্তৃপক্ষকে। সম্প্রতি কমিশনের চেয়ারম্যানের ওই সুপারিশ রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে পৌঁছেছে। রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, কমিশনের সুপারিশ রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে পাঠিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই কমিশনের ওয়েবসাইটে দু’টি সুপারিশই দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কমিশন সূত্রের খবর, প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ। সে দিন শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার ৩ বাসিন্দা আলিপুরদুয়ারের এক বন্ধুর বাড়ি থেকে ফিরছিলেন। তাঁরা হলেন, প্রদীপ কর্মকার, টোটন ঘোষ ও মনোরঞ্জন কবিরাজ। তাঁরা মারুতি ভ্যানে ছিলেন। ঘোকসাডাঙ্গা থানা এলাকায় সিভিক পুলিশ গাড়িটি আটকায়। ৩ জনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের সঙ্গে আপত্তিকর কিছু পাওয়া যায়নি। অভিযোগ, সেই সময়ে ৩ জনকে লক আপে রেখে ২০ হাজার টাকা না দিলে গাঁজা পাচারের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। পর দিন ২০ হাজার টাকা দেওয়ার পরে তাঁদের বিরুদ্ধে লঘু ধারায় মামলা করলে তাঁরা ছাড়া পান বলে অভিযোগকারীদের দাবি। মানবাধিকার কমিশনের কাছে অভিযোগ যায়।

Advertisement

কমিশনের তরফে বিষয়টি তদন্তের জন্য পুলিশকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই মতো কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক অফিসার তদন্ত করে কমিশনকে রিপোর্ট দেন। তাতে অসঙ্গতি দেখে কমিশন সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের তলব করে। যেমন, পুলিশ ৩ জন মদ খেয়ে ছিল বলে দাবি করেছে বলে রিপোর্টে ছিল। তবে ধৃতদের মেডিক্যাল পরীক্ষায় রক্তে অ্যালকোহল রয়েছে কি না, সেটা স্পষ্ট করা হয়নি। কমিশন সংশ্লিষ্টদের জেরা করে নিশ্চিত হয়, ওই ৩ জনকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। সেই সঙ্গে গাঁজা পাচারের খবর পেয়ে গাড়িটি আটক করা হয়েছিল বলে দাবি করা হলেও বিভাগীয় নিয়ম মেনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি।

কমিশন নিজস্ব তদন্তের পরে ঘোকসাডাঙ্গার ওসি তথা এসআই দীপোজ্জ্বল ভৌমিক, এএসআই গোবিন্দ দাসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে। ৩ অভিযোগকারীকে এককালীন ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৪ হাজার টাকা দিতে হবে বলে বলেও কমিশন জানিয়েছে। কমিশনের নির্দেশ সুপারিশ অনুযায়ী, এসআই দীপোজ্জ্বলবাবু ও এএসআই গোবিন্দবাবুর মাইনে থেকে যথাক্রমে ১৪ হাজার ও ১০ হাজার টাকা কেটে ওই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেই সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পেলে যে সব নিয়ম মেনে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতে হয়, তা কোচবিহারের সেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার করেননি বলেও মত কমিশনের। সে জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজিকে যথাযোগ্য পদক্ষেপ করতে অনুরোধ করেছে কমিশন।

দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৪ সালের ৭ জুন। নিউ কোচবিহার থেকে এক প্রতিবন্ধী দম্পতি ডাউন উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে বসেছিলেন। তাঁদের নাম তুষার চৌধুরী ও তুহিনা বসু চৌধুরী। তাঁরা আলুয়াবাড়ি যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, রেল পুলিশের এসআই মিজানুর রহমান তাঁদের ওই সংরক্ষিত কামরা থেকে নামিয়ে দেন। পরে ট্রেনের গার্ডের সহায়তায় তাঁরা গন্তব্যে পৌঁছন। দু’জনে গোটা ঘটনাটি কমিশনে জানিয়ে দেন। তা নিয়ে তদন্তে নামে কমিশন। কমিশনের তরফে শিলিগুড়ির রেল পুলিশ সুপারের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়।

কমিশন সূত্রেই জানা গিয়েছে, রেল পুলিশের শিলিগুড়ির তৎকালীন ডিএসপি পিনাকী মজুমদার ওই তদন্তের দায়িত্ব পান। সব পক্ষকে জেরা করে ডিএসপি রিপোর্ট জমা দেন কমিশনের কাছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে কমিশন আরও কিছু খুঁটিনাটি বিষয়ে খোঁজখবর নেয়। তদন্তের পরে কমিশন ওই এসআই মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের সুপারিশ করেছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে। সেই সঙ্গে এককালীন ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিবন্ধী দম্পতিকে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার সুপারিশও করেছে কমিশন। ওই এসআই মিজানুর রহমানের মাইনে থেকে সেই টাকা কেটে প্রতিবন্ধী দম্পতিকে দিতে হবে বলেও জানিয়েছে কমিশন।

তবে প্রথম অভিযোগের তদন্ত নিয়ে কমিশন উষ্মা প্রকাশ করলেও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তদন্তকারী অফিসার পিনাকী মজুমদারের প্রশংসা করা হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্বরাষ্ট্র দফতরে যে চিঠি পাঠিয়েছেন তাতে, রেল পুলিশের তৎকালীন ডিএসপি পিনাকী মজুমদারের নিরপেক্ষ তদন্তের প্রশংসা করে বিষয়টি সরকারি গেজেটে নথিভুক্ত করারও সুপারিশ করেছেন। রেল পুলিশের এক কর্তা জানান, সুপারিশ মেনেই পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন