ভেসেছে জলাশয়, হতাশ মাছচাষিরা

কোথাও পুকুর উপচে মিশে গিয়েছে রাস্তার জমা জলে। কোথাও আবার বিল উপচে জল ঢুকেছে গ্রামের গলিপথে। প্রবল বৃষ্টিতে এমনই ছবি কোচবিহার জেলার সর্বত্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৭:৫১
Share:

কোচবিহারের বাদুড়বাগানে ভেসেছে পুকুর। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব

কোথাও পুকুর উপচে মিশে গিয়েছে রাস্তার জমা জলে। কোথাও আবার বিল উপচে জল ঢুকেছে গ্রামের গলিপথে। প্রবল বৃষ্টিতে এমনই ছবি কোচবিহার জেলার সর্বত্র।

Advertisement

সরকারি হিসেব বলছে, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে মাছ চাষের ১৫৫০ হেক্টর এলাকা। যার জেরে প্রাথমিকভাবে অন্তত ২৮ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছে মৎস্য দফতর।

জলা উপচে জেলার গ্রামগঞ্জে তো বটেই শহরের বহু বাড়ির উঠোনেও মাছ ঢুকে পড়ে। কোচবিহার শহর লাগোয়া নিউকদমতলা, গাঁধীনগর, রাসমেলা ময়দান, পুলিশ লাইন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় মাছ ধরার হিড়িক নজরে আসে। কোচবিহারের বাসিন্দা কালু বর্মন বলেন, “বৃষ্টির মধ্যে এ দিন রবীন্দ্রভবন লাগোয়া রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। আচমকা নর্দমা থেকে লাফিয়ে রাস্তায় বড়সড় কই মাছ সামনে চলে আসে। সেটি ধরে নিই। এমন সুযোগ তো বারবার আসেনা।”

Advertisement

মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার আরও প্রায় এক হাজার হেক্টর মাছ চাষের পুকুর, বিল, ঝিল থেকে খাল উপচে জল বেরোনোর উপক্রম হয়েছে। রাতে ফের টানা বৃষ্টি হলে ওই সব জলা উপচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। সে ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা। মৎস্য দফতরের কোচবিহার জেলা আধিকারিক অলোকনাথ প্রহরাজ বলেন, “দেড় হাজারের হেক্টরের বেশি জলাশয় ভেসে জল বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ২৮ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কার হিসেব এসেছে। এমন অবস্থা টানা চললে আর্থিক ক্ষতি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

মৎস্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার জেলায় পুকুর, বিল, ঝিল সহ অন্য জলাশয় মিলিয়ে চাষযোগ্য এলাকা রয়েছে ১১,৮৪০ হেক্টর। তার মধ্যে ৯,৫৬০ হেক্টর জলাভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ হয়। ফি বছরে গড়ে ২৩,৪৫৬ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। আর্থিক অঙ্কের হিসেবে ব্যবসা হয় প্রায় ২৮০ কোটি টাকার। এপ্রিল-মে মাস নাগাদ ওই সব জলাশয়ে চারাপোনা ছাড়া হয়। গত কয়েকমাসে সেগুলির আকার খানিকটা বেড়েছে।

কয়েকদিন থেকে জেলাজুড়ে বৃষ্টি শুরু হয় জলাশয়গুলির জল বাড়ছিল। শুক্রবার রাত থেকে জেলাজুড়ে ৫৩৩ মিমি বৃষ্টি হওয়ায় ওই সব জলাশয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা ভেসে গিয়েছে। জল উপচে রুই, কাতল, মৃগেল, বাটা, বাচা, কই, শোল, সরপুটি, কইয়ের মত রকমারি মাছ বেরিয়ে যায়। কোচবিহার সদরের পুটিমারি ফুলেশ্বরী, চান্দামারি, পানিশালা, মোয়ামারি, ঘুঘুমারি ইত্যাদি এলাকায় সবথেকে বেশি জলাশয় উপচে মাছ বাইরে বেরিয়েছে।

মাথাভাঙার গোপালপুরে বাসিন্দা এক মাছ চাষি লক্ষ্মীকান্ত বর্মন বলেন, “আমার ব্যাক্তিগত হ্যাচারি ছাড়াও ১০টি পুকুর ও একটি বিল রয়েছে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের জন্য। এই মরসুমে সবমিলিয়ে ১০ লক্ষাধিক টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। টানা বৃষ্টিতে সবই ভেসে গিয়েছে। গোটা গ্রামে অন্য মাছ চাষিদেরও ওই একই অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে।” সাতমাইল এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্তা অমল রায় বলেন, “সংস্থার উদ্যোগে ৬০ বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। বৃষ্টিতে সব পুকুরই উপচে মাছ বেরিয়ে গিয়েছে। প্রায় ১১ লক্ষ টাকার বিনিয়োগ করা হয়েছিল। বর্ষার জলে তার বড় অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন