ফের ঋণের দায়ে কীটনাশক খেয়ে এক আলুচাষি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার রাতে মালদহর গাজলের পাণ্ডুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গোলঘর গ্রামে তাঁর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় গ্রামে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম ফড়িং ঘোষ (৫০)। তিনি চাষবাস করতেন। পরিবারের লোকেদের দাবি, আলু চাষ করার জন্য তিনি গ্রামের কয়েক জনের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। অন্যের জমিতে লিজে চাষ করছিলেন। তবে এবার উত্পাদন ভাল হলেও দাম পাননি। সে কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি তাঁর পরিবারের।
গাজলের বিধায়ক তৃণমূলের সুশীলকুমার রায় অবশ্য বলেন, “শুনেছি একজন চাষি আত্মহত্যা করেছেন। তবে তাঁর প্রচুর দেনা হয়ে গিয়েছিল এবং পারিবারিক বিবাদও ছিল। আলুর জন্যই এমন হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না।” ফড়িংবাবুর বড় ছেলে দিলীপ ঘোষ অবশ্য জানান, তাঁদের কোনও পারিবারিক বিবাদ ছিল না। তিনি জানান, তাঁর বাবা বরাবরই অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষবাস করেন। এ বার গ্রামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে সাড়ে পাঁচ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আলু চাষ করেছিলেন। সে জন্য তিনি ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। তারপরে আলুর বাজারের অবস্থা দেখে সপ্তাহখানেক ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। তিনি বলেন, “আমরা কথা বলতে গেলে ঠিক মতো উত্তর না দিয়ে উল্টে গালমন্দ করতেন। এ বার আলু বেচে যা আয় হয়েছে, তাতে তাঁর ঋণ শোধ হবে না।” সে দিন রাতে খাওয়া দাওয়ার পর শোওয়ার ঘরে তাঁকে ছটফট করতে দেখা যায়। তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাতিমারি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভর্তি করানোর আধঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবার সকালে পুলিশ মৃতদেহটি ময়না তদন্তের জন্য মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠিয়েছে। দিলীপবাবু বলেন, “আমাদের মনে হচ্ছে হতাশায় তিনি এমন কাজ করেছেন।” মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আত্মহত্যার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ফড়িংবাবুর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দুই ছেলেরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁদের পরিবারে মোট ১০ জন সদস্য রয়েছেন। ছোট ছেলে কার্তিক ঘোষ মাস চারেক আগে পথ দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যাওয়ায় বাড়িতে বসে। বড়ো ছেলে কুলির কাজ করেন। সংসারের ভার ছিল ফড়িংবাবুর উপরেই। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য কংগ্রেসের দাসু মণ্ডল বলেন, “ওই চাষি আলুর দাম না পাওয়ায় মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। সে জন্যই তিনি আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান।” গত ২৫ তারিখে বামনগোলা ব্লকের হাঁসপুকুর গ্রামের এক আলুচাষি জমিতে দেওয়ার কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। তিনিও ঋণ নিয়ে জমিতে চাষবাস করেছিলেন। তবে তাঁর জমিতে তেমন আলু ও ভুট্টা চাষ হয়নি। প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।