মরসুম পেরিয়ে যেতে বসেছে। অথচ নোটের গেরোয় আলু চাষ করতে পারছেন না মালদহের চাঁচল মহকুমার বহু চাষি। একই ছবি আলিপুরদুয়ারেও। সেখানেও ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ না পাওয়ায় চাষ শুরু করতে পারেননি অনেকে।
চাঁচলে আমন ধান ওঠার পর কোথাও জমি পতিত পড়ে রয়েছে। কোথাও বা চাষের জন্য জমি তৈরি করে রাখলেও চাষ শুরুই করতে পারেননি চাষিরা। আবার চাষিদের অনেকেই সামান্য জমিতে আলু চাষ করলেও বাকি জমি পতিত পড়ে রয়েছে। ফলে যা পরিস্থিতি, তাতে এ বছর আলু চাষের জমি অর্ধেকেরও বেশি কমে যাওয়ায় উত্পাদনও কমবে বলে মনে করছে কৃষি দফতর। নগদের জোগানের অভাবেই যে এমন সমস্যা তা মেনে নিচ্ছেন চাঁচল-২ ব্লকের সহকারি কৃষি অধিকর্তা দেবাশিস ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘মূলত টাকার জন্যই এ বার গমের সঙ্গে আলু চাষ করতেও চাষিরা সমস্যায় পড়েছেন।’’
একই ছবি আলিপুরদুয়ারে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আলুর বীজ রোপণের সময়ে শেষ হতে চলেছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ বার কুড়ি শতাংশ চাষিও চাষ শুরু করতে পারেননি। আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মনোরঞ্জন দে জানান, একটি ব্লকে কয়েকশো চাষি আলুর মরসুমের দিকে তাকিয়ে থাকেন। নোট সমস্যার জেরে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাননি চাষিরা। সমস্যার কথা স্বীকার করে ডিস্ট্রিক লিড ব্যাঙ্কের ম্যানেজার তুষারকান্তি রায় বলেন, ‘‘অনেক ব্যাঙ্ক লোন দিতে পারছে না। বিষয়টি দেখছি।’’ কৃষি দফতরের আধিকারিকদেরও আশঙ্কা আলুর উৎপাদন ব্যাপক মার খাবে। তাই আগামী দিনে বাজারে আলুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চাঁচল মহকুমায় প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। সব থেকে বেশি আলু চাষ হয় রতুয়ার সামসি এলাকায়। কিন্তু ব্যাঙ্ক বা এটিএমে লাইন দিয়ে টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন চাষিরা। অন্য বছর আমন ধান কিছুটা বিক্রি করলেও আলু চাষ করে থাকেন অনেকেই। কিন্তু এ বার একেই ধানের দাম কম। বাজারে নিয়ে গেলেও টাকার সমস্যায় বিক্রি করতে পারছেন না চাষিরা। আলিপুরদুয়ারের তপসিখাতাতেও দেখা যায় বিঘের পর বিঘে জমিতে প্রথম পর্যায় হাল দিয়ে ফেলে রেখেছেন চাষিরা। স্থানীয় আলুচাষি সমিতির শঙ্কর দাস বলেন, ‘‘কয়েকশো চাষি লাঙল করে বসে আছেন। কোথা থেকে সার কিনবেন, কী ভাবে শ্রমিকদের মজুরি দেবেন ভেবে পাচ্ছেন না।’’