কাজ: বৃষ্টি নিয়েই চলছে প্রতিমা শুকোনর কাজ। —নিজস্ব চিত্র।
বন্যায় আটকে গিয়েছে গণেশের সাজসজ্জা। হাতে আর মাত্র কয়েক দিন। কিন্তু কোথায় মুকুট, কোথায় বাহুবন্ধ? তবে কী নেহাতই আটপৌরে সাজে এ বার গণপতিকে মণ্ডপে পাঠাতে হবে? এমনই আশঙ্কায় শিলিগুড়ির কুমোরটুলি।
আগামী ২৫ অগস্ট গণেশ চতুর্থী। সে দিন থেকেই শুরু গণপতি উৎসব। গত কয়েক বছর ধরে শিলিগুড়ি শহর এবং লাগোয়া এলাকায় ধুমধাম করে গণেশ পুজোর আয়োজন বাড়ছে। শিলিগুড়ির কুমোরটুলি ঢুকলেই সব স্টুডিওতে এখন গণেশের মূর্তির ছড়াছড়ি। রং হয়ে শুকিয়েও গিয়েছে। অপেক্ষা শুধু সাজ পরানোর। তাতেই বাধ সেধেছে বন্যা। দুই দিনাজপুর এবং মালদহে বন্যা পরিস্থিতির জন্য দক্ষিণবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ এখনও বিপর্যস্ত। ঘুরপথে যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল শুরু হলেও পণ্যবাহী ট্রাক থমকে রয়েছে।
প্রতি বছরের নিয়ম অনুযায়ী গণেশ পুজোর আগে জরি-রাংতা-শোলার অলঙ্কার, সাজসজ্জা কলকাতা, মেদিনীপুর, ২৪ পরগনা, পুরুলিয়ার মতো জেলা থেকে উত্তরবঙ্গে আসে। গণেশ, বিশ্বকর্মা থেকে শুরু করে দুর্গা-লক্ষ্মী-কালী প্রতিমা তৈরি করতে সেগুলি ব্যবহার হয়। এ বার শুরুতেই বিপত্তি। সোনালি, রূপোলি জরির যতরকম সাজ প্রতিমায় দেখা যায় তার সবটাই দক্ষিণবঙ্গ থেকে আসে বলে জানালের মৃৎশিল্পী অজিত পাল। তিনি বলেন, ‘‘কবে ট্রাক আসবে কেউ বলতে পারছেন না। তেমন হলে সাজ ছাড়াই প্রতিমা মণ্ডপে যাবে।’’
শুধু সাদামাটা সাজই নয় প্রতিমার দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের সামাল দেওয়াও সমস্যা হয়ে যাবে। দিনের পর দিন ট্রাক আটকে থাকলে অথবা ঘুরপথে এলে সব অলঙ্কারের দাম বেড়ে যাবে। অজিতবাবু বলেন, ‘‘সরবরাহকারীরা বেশি দামের কথা ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন। পুজো কমিটি কি সে কথা শুনবে? আমাদেরই বাড়তি টাকা গুনতে হবে।’’ পাহাড়ের ছোট-বড় পুজোর মূর্তিও শিলিগুড়ি থেকেই এতদিন গিয়েছে। কিন্তু পাহাড় পরিস্থিতির জেরে প্রতিমার বায়না এখনও আসেনি। টানা বন্ধ চলায় পাহাড়ের পুজো কমিটিগুলো এখনও পুজোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কুমোরটুলির রমেন পালের কথায়, ‘‘পাহাড়ের বায়না আসেনি। বন্যা অলঙ্কার-সাজসজ্জার দাম বাড়িয়েছে। কী হবে শেষে জানি না।’’
আকাশে কালো মেঘ সরে শরতের নীল আকাশ উকি দিয়েছে। কুমোরটুলির স্টুডিওর পিছনে ফাঁকা জমিতে ফুটছে কাশও। তবে পাহাড় ও বন্যা দুই বিপর্যয়ের ঠেলায় মোটেই মন ভাল নেই শিলিগুড়ির কুমোরটুলির।