জুহি চৌধুরীর বাড়ির সামনে যুব তৃণমূলের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
অনাথ ও ভবঘুরে মহিলাদের হোম হিসেবে অনুমোদন পেয়েছিল ‘আশ্রয়’। কিন্তু সেখানে দিনের পর দিন অন্তঃসত্ত্বা কুমারী মায়েদের রাখা হতো। এমনটাই দাবি সিআইডির। গত এক বছরে অম্তত তিরিশ জন অন্তঃসত্ত্বাকে জলপাইগুড়ির ওই হোমে আনা হয়েছে বলে জানতে পেরেছে সিআইডি। যদিও হোমের নথিতে তার কোনও উল্লেখ নেই।
ওই মহিলা এবং তাদের শিশুরা এখন কোথায় রয়েছে, কেন হোমের নথিতে তার কোনও উল্লেখ নেই তাই জানতে চাইছে সিআইডি। অন্তঃসত্ত্বাদের কোথায় প্রসব হয়েছে তাও খতিয়ে দেখছে সিআইডি। নিয়মানুযায়ী কোনও হোমে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা থাকলে নথিতে অবশ্যই তার উল্লেখ করতে হয়। যদিও ‘আশ্রয়’ হোমের কোনও নথিতেই সে সবের উল্লেখ থাকতো না বলে কর্মীদের কয়েকজনই সিআইডির জেরায় কবুল করেছেন। শুক্রবার সিআইডি ‘আশ্রয়’ হোমের সুপার দীপ্তি ঘোষ এবং বিমলা শিশু গৃহের কর্মী ভাগ্যশ্রী ভট্টাচার্যকে পৃথক ভাবে জেরা করেছে।
গত শনিবার নর্থ বেঙ্গল পিপলস ডেভেলপমেন্ট কমিটির জলপাইগুড়ির বেগুনটারির হোমে অভিযান চালিয়ে কর্ণধার চন্দনা চক্রবর্তী এবং কর্মী সোনালি মণ্ডলকে গ্রেফতার করে সিআইডি। শিশু বিক্রির অভিযোগে দু’জনকে ধরে পুলিশ। সে দিন থেকেই সংস্থার তিনটি হোমের কর্মীদের জেরা করা হচ্ছে। ‘আশ্রয়’ হোমের এক কর্মীকে জেরা করে সিআইডি জেনেছে সেখানে কুমারী মায়েদের সংখ্যা বেড়ে চলছিল। বেশিরভাগ সময়েই তাঁদের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আনা হতো। প্রসবের পরে মায়েদের আর হোমে রাখা হতো না। তারা কোথায় যেত, তাদের সদ্যোজাত সন্তানদের কী হতো তা কর্মীরাও জানতেন না বলে সিআইডির কাছে দাবি করেছেন। তবে জেরায় হোমের এক পদস্থ কর্মী দাবি করেছেন, প্রসবের পরে শিশুদের বিমলা শিশুগৃহে পৌঁছে দেওয়া হতো। হোমের তরফে তাঁদের জানানো হয়েছিল, আইন মেনে ওই শিশুদের দত্তক দেওয়া হবে। যদিও এমন কোনও দত্তকের কথা শিশু কল্যাণ সমিতির সদস্যরা জানেন না বলে সিআইডির কাছে দাবি করেছেন। ওই শিশুদের দত্তক দেওয়ার প্রক্রিয়াও খতিয়ে দেখছে সিআইডি। হোমের কর্মীরা দাবি করেছেন, নিয়ম মেনে কাজ হচ্ছে কি না জানতে চাইলে ছাঁটাইয়ের হুমকি দিতেন চন্দনা।
সিআইডির দাবি ‘আশ্রয়’ হোমে অনেক অনিয়ম বাসা বেধে রয়েছে। হোমের কাগজপত্র পরীক্ষা চলছে। একাধিক সূত্রও মিলতে পারে বলে দাবি। বছর দশেক ধরে জলপাইগুড়ির দেবনগর এলাকায় আশ্রয় হোম চলছে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কখনও অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী, কখনও নাবালিকাদেরও হোমে রাখা হতো।
তদন্তে চার-পাঁচ জন বিদেশি নাগরিকের কথাও তাঁরা জানতে পেরেছেন বলে সিআইডি আধিকারিকদের দাবি। এরা শিশু দত্তকের জন্য চন্দনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন৷ সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷