মানব পাচার তাঁদের বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন নেপালের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন অনুপ রাজ শর্মা। কিছু দিন আগে পর্যন্তও তিনি নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ছিলেন। শুক্রবার দুপুরে নেপাল থেকে শিলিগুড়িতে পৌঁছে তিনি ওই কথা বলেন। আজ, শনিবার থেকে দাগাপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব লিগ্যাল স্টাডিজে দু’দিনের ‘সার্ক ল কনক্লেভ’ শুরু হতে চলেছে। অনুপ রাজ শর্মা সেখানেই প্রধান অতিথি হিসাবে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘মানব পাচার নেপালের একটি বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত-নেপালের বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তির জন্য খোলা সীমান্ত রয়েছে। এই সুযোগে মানব পাচার বাড়ছে। শুধু মানব পাচার নয়, মাদক, কিছু জঙ্গি কার্যকলাপ, চোরাকারবারের মতো কাজকর্মেরও খবরও আসে। এটা বন্ধ করার রাস্তা খুঁজতে হবে। সরকারি স্তরেও বিষয়গুলি নিশ্চয়ই দেখা হচ্ছে।’’
তিনি জানান, প্রতি দিন ভারত-নেপালের বাসিন্দাদের মধ্যে কে যাচ্ছেন, কে আসছেন, তা নথিভুক্ত করা হয় না। অন্য দেশের বাসিন্দা হলে অবশ্য তা করা হয়। তাই ভারত আর নেপালের বাসিন্দাদের মধ্যে কত লোক যাচ্ছেন, আর ফিরছেন না, তা পরিষ্কার নয়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে এই সংখ্যাটা বার করা প্রক্রিয়া কী ভাবে তৈরি করা যায় তা দেখছি। সরকারকের কাছেও তা জানানো হবে।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, ১৯৫১ সালের চুক্তিটিতেও আরও নতুন করে সংশোধনী দরকার। এই সব কারণেই সার্ক ল কনক্লেভ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনের শিক্ষা, ব্যবহার বর্তমান সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, আরও কী করা দরকার, তা নিয়েই আমরা মতামত রাখব।
বোম্বে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিশিতা মহাত্রে ও এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ ছাড়াও ভুটান হাইকোর্টের বিচারপতি গেম্বো তাশি, সার্কের অন্যতম সেক্রেটারি জেনারেল, শ্রীলঙ্কার কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরাও কনক্লেভে যোগ দেবেন। থাকবেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আইন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রতিনিধিরা। উদ্যোক্তারা জানিয়েছে ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২৬ ফেব্রুয়ারি কনক্লেভে আইন শিক্ষা এবং প্র্যাকটিস নিয়ে আলোচনা হবে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বিষয় আলোচনায় উঠে আসবে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব লিগ্যাল স্ট্যাডিসের চেয়ারম্যান জয়জিৎ চৌধুরী জানান, নেহেরু গোল্ডকাপ ফুটবল দিয়ে বিশ্বের দরবারে শিলিগুড়ি একটা পরিচয় তৈরি হয়েছিল। নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান, চিনের মতো সীমান্তে এই এলাকায় পাশেই রয়েছে। সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ঐতিহাসিক ভাবে দেশগুলির মধ্যে মিলও রয়েছে। তেমনই রয়েছে একই ধরনের নানা সমস্যা। এশিয়ান হাইওয়ের কাজ পুরোদমে চলছে। বিভিন্ন দেশের সড়ক পথে তাতে জুড়ে যাবে। তাই এখনই শিলিগুড়ির মতো এলাকায় ‘সার্ক ল ইউনিভার্সটি’ তৈরি করা দরকার। কনক্লেভে তা আলোচনার পর কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার তো বটেই সার্কভুক্ত দেশগুলির কাছে আমরা তা জানাব। আগামী সার্ক সামিটে তা নিয়ে আলোচনাও হতে পারে।