পথে: হেলাপাকড়িতে প্রতিবাদ মিছিল। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
প্রথমদিকটায় মিছিলের সামনের সারিতে আর পাঁচজনের সঙ্গে বেশ পা মিলিয়েই হাঁটছিলেন ওই যুবক। হঠাৎ পা যেন আর চলল না।
মিছিল থেকে বেরিয়ে রাস্তার পাশে একটি বাঁশের মাচার উপর ধপ করে বসে পড়লেন বছর ছাব্বিশের ওই যুবক। একজন তাকে জল এগিয়ে দিতেই বললেন, ‘‘জানেন, খুব বায়না ছিল এ বার পুজোয় নতুন জামা নয়, সোনার চেন চাই। বোনকে সোনার মালা গড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ ছিল না। ভিন রাজ্যে দিনমজুরি করে খাই। তবু পরিশ্রমের টাকা জমিয়ে বাইশ হাজার টাকা দিয়ে গতবার পঞ্চমীর দিন বোনকে একটি সোনার মালা কিনে দিয়েছিলাম। মালায় ফুল আঁকা একটা লকেটও ছিল। কখনও ভাবিনি ঠিক একইদিনে বোনের মৃত্যুর প্রতিবাদ মিছিলে হাঁটতে হবে আমাকে।’’ নিখোঁজ হওয়ার দিনও বোনের গলায় ওই সোনার মালা ছিল বলে জানালেন জল্পেশে মৃত কিশোরীর দাদা। তবে মৃতদেহ থেকে মালা পায়নি পুলিশ।
শুধু কিশোরীর পরিজনেরাই নন, রবিবার সন্ধেয় ময়নাগুড়ির হেলাপাকড়ি বাজারে খুনের প্রতিবাদ ও দোষীদের শাস্তি চেয়ে মিছিলে সামিল হলেন বহু মানুষ। দাবি একটাই। দোষিদের ফাঁসি চাই। মিছিলে অন্যতম উদ্যোক্তা শিক্ষক বিরাস রায় ডাকুয়া বলেন, ‘‘এখনও পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করতে পারল না। আমরা ঘটনায় কোনও রাজনীতির রঙ লাগতে দেব না। তাই সম্পূর্ণ অরাজনৈতিকভাবে মিছিল করেছি। দাবি পূরণ না হলে আরও বড় আন্দোলন শুরু করব।’’ এলাকার একটি ক্লাবের সদস্য কমল রায় বলেন, ‘‘এর আগেও হেলাপাকড়িতে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দোষীরা পার পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু এ বার আর আমরা দোষীদের ছাড়ব না। প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হব।’’ এ দিন মিছিলের আগে সকালে একটি বাইক র্যালিও করেন প্রতিবাদীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, তিন অভিযুক্তই ময়নাগুড়ি ছেড়ে অন্যত্র গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলে তাদের সন্দেহ। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ডেন্ডুপ শেরপা বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের কাউকেই ছাড়ার কোনও প্রশ্ন নেই। পুলিশ যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে।’’