Rickshaw-puller

Durga Puja 2021: রিকশা পুরনো হচ্ছে, সরছে মানুষও

স্ট্যান্ডও টোটোর দখলে। রিকশাচালকদের অনেকে দৈনিক কিস্তিতে টোটো চালাচ্ছেন।

Advertisement

ধীরেন দেবনাথ

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২১ ০৮:০৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

পুজো এলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। একটা সময় ছিল যখন আমি দুর্গাপুজোয় বিকেলের পর থেকেই দম নেওয়ার ফুরসত পেতাম না। রিকশার সামনে সর্ষের তেলের ছোটো বাতি জ্বালিয়ে বেরিয়ে পড়তাম বাড়ি থেকে। পঞ্চমী থেকে নবমী, রোজ সন্ধ্যায় কম করে হলেও পাঁচ থেকে সাতটি বাড়ির লোককে নিয়ে ঘুরতাম। খুব বেশি দিনের কথা নয়। বছর চারেক আগেও বিকেল থেকে রাত একটা - দেড়টা পর্যন্ত ঘণ্টা চুক্তিতে প্যান্ডেলে ঘুরেছি। ঘণ্টা প্রতি দু’শো থেকে তিনশো টাকা পেতাম। অনেকে আবার ভালোবেসে বকশিসও দিতেন। কেউ খাবারের দোকান থেকে কিনে দিতেন খাবার। ঘরে ঢুকত দুই থেকে তিন হাজার টাকা। সেই সব দিন মুহূর্তে যেন হারিয়ে গেল!

Advertisement

৪২ বছর ধরে জলপাইগুড়িতে রিকশা চালাচ্ছি। দুর্গাপুজোর সময়ে এখন আর বিকেলে রিকশা নিয়ে বের হতে মন চায় না আমার। তবুও পেটের দায়ে স্ট্যান্ডে এসে রিকশা নিয়ে চুপচাপ বসে থাকি। তার মধ্যেই দেখি সামনে দিয়ে এক একটি টোটোতে চার থেকে পাঁচ জন যাত্রী পুজো দেখতে চলে যাচ্ছেন।

রিকশার ঘরে এই ভাবেই থাবা বসাচ্ছে টোটো। আগে তো ভ্যানে চাপিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে বাচ্চাদের নিয়েও যেতাম। বছর দুয়েক আগেও তো এমনই ছিল। এই রিকশা টেনেই তো ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছি কিছুটা। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। দুই ছেলেকে বড় করেছি। কিন্তু অতিমারির আকালে জীবনটাই যেন বদলে গেল।

Advertisement

সরকারি কোনও সুযোগ পাইনি আমি। এমনকি বৃদ্ধ ভাতাটাও হয়নি। মা দুর্গা হয়তো আমার উপর একটু রেগেই থাকেন, তাই হয়তো কিছুই মেলেনি। এখন সারাদিন রিকশা চালিয়েও একশো টাকা ঘরে আনা যায় না। দু’বছর আগেও আড়াইশো-তিনশো টাকা দৈনিক আয় হত। এখন শহর জুড়ে শুধুই টোটো। অতিমারির আবহে মানুষ যেন আরও রিকশা বিমুখ হয়ে গিয়েছে। আমাদের স্ট্যান্ডও টোটোর দখলে। রিকশাচালকদের অনেকে দৈনিক কিস্তিতে টোটো চালাচ্ছেন।

রিকশা চালানোর শুরুর দিকে বেশ কয়েক বছর মালিকের রিকশা কিস্তিতে টানতাম। দৈনিক দেড় টাকা থেকে দুই টাকা কিস্তি ছিল। ধীরে ধীরে নিজেই একটা পুরনো রিকশা কিনে নিয়েছি। এ ভাবেই যেন কেটে যায় আমার দিন। তবে দুর্গাপুজোর ক’টা দিন সত্যিই খুবই কষ্ট পাই আমি।

(অনুলিখন: অর্জুন ভট্টাচার্য)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন