ভূমিকম্পের ঘটনায় আতঙ্কে অসুস্থ (প্যানিক অ্যাটাক) হয়ে পড়েছেন অনেকেই। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভূমিকম্পে অসুস্থ হয়ে অন্তত ৪৬ জন ভর্তি রয়েছেন। গত শনিবার ভূমিক ম্পের পর থেকেই এ দরণের রোগীদের আনাগোনা বেড়েছে হাসপাতালগুলিতে। তাদের অধিকাংশই আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে চিকিৎসকদের মত। কেই ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন। কেউ দৌড়ঝাঁপ করে পালাতে গিয়ে পড়ে জখম হয়েছেন।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, ‘‘অধিকাংশই আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর, ভয় কেটে গেলে অনেককে ছুটিও দেওয়া হচ্ছে। আবার অনেকে আসছেন। যাঁরা জখম হয়েছেন তাদের চিকিৎসা চলছে।’’ এ দিন শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থদের দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাদের ব্যাপারে প্রযোজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মণ্ডল জানান, প্যানিক অ্যাটাকেই অধিকাংশ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মহিলাদের সংখ্যাই বেশি। যাঁরা ভর্তি হচ্ছেন ৭০ শতাংশই মহিলারা। তবে সকলের ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মনোবিদ এবং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, একটুতে য়াঁরা হতাশ হয়ে পড়েন, চঞ্চল, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, ধৈর্য কম এমন ব্যক্তিদের ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্যানিক অ্যাটাক হলে কেউ জ্ঞান হারায়। শরীর দরদর করে ঘামতে থাকে। আতঙ্কে ‘পালস রেট’, হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। বুক ধড়ফড় করতে শুরু করে। অনেকের শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। নিজেকে উদভ্রান্তের মতো মনে হয়। মনে হয় এই বুঝি ‘হার্ট ফেল’ হবে। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে ওঠে। অন্য দিকে মানসিক ভাবে যারা শক্ত আতঙ্কে তাঁদের অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা কম। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মনরোগ বিশেষজ্ঞ নির্মল বেরা বলেন, ‘‘ভূমিকম্পের জন্য অনেকেই আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অনেকেই মানসিক ভাবে শক্ত নয়। তাদের ক্ষেত্রে এ ধরণের প্রণতা বেশি হয়। সে কারণে অযথা আতঙ্কিত না হওয়াই উচিত।’’
প্যানিক অ্যাটাক এড়াতে কী করণীয়. নির্মলবাবুর মতো চিকিৎসকদের পরামর্শ, জ্ঞান হারালে বা গুরুতর অসুস্থ বোধ করলে তার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। তবে আতঙ্কে অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা দেখা দিলে সে সময় বেশি করে জল খেতে হবে। শান্ত, ধীর স্থির হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। গুজবে কান দেওয়া মোটেই চলবে না। সে কারণে একেতাকে ফোন করা, বিভিন্ন খোজখবর নেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের খবর শোনা, সোস্যাল নেট ওয়ার্ক-এ চোখ রাখার দরকার নেই। চোখে মুখে জল দেওয়া দরকার। মুখ বড় করে শ্বাস নিতে হবে। শ্বাস ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে। শিলিগুড়ির বাসিন্দা মনোবিদ সোমা ঘোষ বলেন, ‘‘গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। তা ছাড়া ওই বিষয়ের আলোচনা থেকে দূরে থাকতে হবে। রোগীকে এমন জায়গায় রাখতে হবে সেখানে সে সমস্ত আলোচনা চলছে না। অন্য বিষয়ে কথা বলে স্বাভাবিক করতে হবে। গল্প করতে হবে।’’
ভূমিকম্পের ঘটনায় অসুস্থ হয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন ফতেমা খাতুন। কামরাঙ্গাগুড়ি এলাকায় বাড়ি। রবিবার সাড়ে বারোটা নাগাদ ভূমিকম্পের সময় তিনি কাঁপতে কাঁপতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরিবারের লোকেরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন,‘‘ভয় লাগছিল। সব কিছু কাঁপছিল।’’
তিনবাতি এলাকার একটি কোম্পানির কলসেন্টারে কাজ করছিলেন শকুন্তলা হালদার, পম্পা রায়, জয়ন্তী পালদের মতো অনেকেই। ভূমিকম্প হচ্ছে টের পেয়েই অফিসের ভবন থেকে হুড়োহুড়ি করে বার হতে শুরু করে সকলে। সিঁড়িতে পড়ে গিয়ে জখম হন নবনীতা দাস, নূর খানরা। শকন্তুলা হালদারের পেটে চেয়ারের আঘাত লাগে। তাঁরা জানান, ভূমিকম্পের সময় ভয় পেয়ে যান তারা। লাফিয়ে নামতে গিয়ে সিঁড়িতে পড়ে যান কেউ কেউ।