Siliguri

Siliguri: বিলাসবহুল হোটেলে ঘর পেতে পরিচয়পত্র লাগে না! ধর্ষণকাণ্ডে প্রশ্নের মুখে শিলিগুড়ি পু‌লিশ

সম্প্রতি শিলিগুড়ির ধর্ষণ মামলায় হস্তক্ষেপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, শহরের একটি বিলাসবহুল হোটেলে ওই ঘটনা ঘটে।

Advertisement

পার্থপ্রতিম দাস

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২২ ০২:৩৫
Share:

শুধু ওই বিলাসবহুল হোটেলই নয়, শহরের অন্তত চার-পাঁচটি হোটেলে এমনটাই ‘দস্তুর’। ফাইল চিত্র।

শিলিগুড়ির ধর্ষণ-কাণ্ডে সম্প্রতি হস্তক্ষেপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, শহরের একটি বিলাসবহুল হোটেলের ঘরে একাধিক বার ধর্ষণ করা হয় দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে। শুধু তাই নয়, তাদের আরও মারাত্মক অভিযোগ, কোনও রকমের পরিচয়পত্র ছাড়াই ‘ধর্ষক’কে হোটেলের ঘর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ জানানোর পরেও হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি পুলিশ। তবে এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পর জানা যাচ্ছে, শুধু ওই বিলাসবহুল হোটেলই নয়, শহরের অন্তত চার-পাঁচটি হোটেলে এমনটাই ‘দস্তুর’। অল্প সময়ের জন্য ঘর ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনও পরিচয়পত্রই লাগে না। টাকার বিনিময়ে সবই ‘ব্যবস্থা’ হয়ে যায়। আর পুলিশ এ সব ক্ষেত্রে ‘দর্শক’মাত্র।

Advertisement

নিয়ম অনুযায়ী, এই সব হোটেলে যে বা যাঁরা ঘর বুক করেন, তাঁদের প্রথমে ‘রিসেপশন’-এ এসে কথা বলার কথা। তার পর নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম পালন। সেই সময়ে নিজের নাম-ঠিকানা-ফোন নম্বরের পাশাপাশি হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হয় সচিত্র পরিচয়পত্র। তার পর চাবি পাওয়া এবং ঘরে যাওয়া। গত ২০ মার্চ শহরের যে বিলাসবহুল হোটেলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ, তার সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গিয়েছে, দুই নাবালিকার সঙ্গে এক যুবক সোজা হোটেলের ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, তাদের পরিচয়পত্র চাওয়া হয়েছিল কি? হোটেলের কাছে কি কোনও নথি আগে থেকেই ছিল? তাদের হোটেলের ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিলেন কে? এই সব প্রশ্নের উত্তরে মাল্লাগুড়ির ওই বিলাসবহুল হোটেলের পক্ষে হিমাংশু শেখর বলছেন, ‘‘বিষয়টি বিচারাধীন। বাইরের লোককে আমি কোনও কিছুই বলতে পারব না।’’

নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, মাল্লাগুড়ির বিলাসবহুল হোটেলে ওই দিন ধর্ষণে অভিযুক্ত সাগর ছেত্রী এবং দুই নাবালিকা গিয়েছিল। সাগর তার প্রেমিকাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেও প্রেমিকার বান্ধবীকে হোটেলের ঘরে আটকে রাখে। তাকে একাধিক বার ধর্ষণ করে। যার প্রমাণ মিলছে মেডিক্যাল রিপোর্টে। ধর্ষিতা নাবালিকা, শহরের নামী স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। ঘটনার কথা ওই নাবালিকার পরিবারের লোকজন জানার পর এফআইআর দায়ের হয় শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের অন্তর্গত প্রধান নগর থানায়। মামলা হয় পকসো আইনে। নিয়ম অনুযায়ী, হোটেলে আসা ব্যক্তিদের নথি অনলাইনে তুলে রাখার কথা। সেই নথি সরাসরি চলে যাওয়ার কথা পুলিশের সাইবার সেলে। এ ক্ষেত্রে কোনও নথি কেন ছিল না? পুলিশের তরফে কি তা হলে নজরদারিতে কোনও গাফিলতি রয়েছে? অভিযোগ পাওয়ার পরেও কেন হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না? এ সব প্রশ্ন করলে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার গৌরব শর্মা আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমাকে জেনে বলতে হবে। পরে কথা হবে।’’

Advertisement

হোটেল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ কিছু বলতে না চাইলেও শিলিগুড়ি শহরের একাধিক হোটেলে এমনটাই চলে আসছে বলে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ। এ প্রসঙ্গে গ্রেটার শিলিগুড়ি হোটেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সম্পাদক উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, ‘‘এমন ঘটনা কখনওই কাম্য নয়। আর নিয়মের বিষয়ে বলতে গেলে, কোনও অতিথি হোটেলে ‘চেক ইন’ করার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সাইবার সেলে অনলাইনে সেই নথি জমা পড়ে। বিপরীত লিঙ্গের কেউ যদি কোনও অতিথির সঙ্গে দেখা করতে আসেন, সে ক্ষেত্রে হোটেলে বসবার জায়গায় দেখা করতে হয়, ঘরে নয়। এই নিয়ম সব হোটেলের ক্ষেত্রেই এক।’’

আরও পড়ুন:

নিয়ম আছে। কিন্তু সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শহরের একাধিক হোটেলে বিভিন্ন সময় মধুচক্রের আসর বসানোর অভিযোগও ওঠে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হোটেল-মালিক বলছেন, ‘‘এ বার সম্ভবত পালে বাঘ পড়েছে। কারণ, শিলিগুড়ি ধর্ষণ-কাণ্ডে এ বার হস্তক্ষেপ করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। এই সব নিয়ম ভাঙার গল্প নিশ্চয়ই আদালতের কানে যাবে। সন্ধ্যার পর অল্প সময়ের জন্য ঘর এই সব নামী-দামি হোটেলে পাওয়া যায়। কোনও পরিচয়পত্র লাগে না। আমাদের মতো ছোটখাটো হোটেল চাইলে অনেক সময় অতিথিরা বিরক্তও হন। কিন্তু নিয়ম তো নিয়ম। যে পুলিশ এত দিন দর্শকের ভূমিকায় ছিল, তারা হয়তো এ বার বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করবে কড়া ভাবে। কয়েক জনের জন্য গোটা ইন্ডাস্ট্রিরই বদনাম হয়ে যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন