শো-কজের জবাবে কার্যত ভুল স্বীকার রবীন্দ্রনাথ ঘোষের

তৃণমূল প্রার্থীকে রাজ্য সরকারের প্রার্থী বলে ঘোষণা করে ভুল করেছিলেন বলে স্বীকার করলেন দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি কোচবিহারের মহকুমাশাসক তথা মহকুমা নির্বাচনী আধিকারিক বিকাশ সাহার কাছে ওই ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে চিঠি দেন। তাঁর মন্তব্যকে যাতে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের মধ্যে ধরা না হয়, সে ব্যাপারেও কমিশনের কাছে আর্জি জানান রবীন্দ্রনাথবাবু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১৮
Share:

তৃণমূল প্রার্থীকে রাজ্য সরকারের প্রার্থী বলে ঘোষণা করে ভুল করেছিলেন বলে স্বীকার করলেন দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। মঙ্গলবার বিকেলে তিনি কোচবিহারের মহকুমাশাসক তথা মহকুমা নির্বাচনী আধিকারিক বিকাশ সাহার কাছে ওই ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে চিঠি দেন। তাঁর মন্তব্যকে যাতে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের মধ্যে ধরা না হয়, সে ব্যাপারেও কমিশনের কাছে আর্জি জানান রবীন্দ্রনাথবাবু।

Advertisement

কমিশন সূত্রে খবর, রবীন্দ্রনাথবাবু জানিয়েছেন, তিনি শাসক দলের প্রার্থীর হয়ে কোচবিহার পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার করছিলেন। প্রসঙ্গত রাজ্য সরকারের নানা উন্নয়নের কাজের কথা তুলে ধরার সময়ে তিনি শাসক দলের প্রার্থীকে রাজ্য সরকারের প্রার্থী বলে উল্লেখ করেন। তাঁর দাবি, পরে তিনি সে ভুল শুধরে নিলেও সংবাদমাধ্যমে একতরফা ভাবে তাঁর ভুলটা দেখানো হয়েছে। তিনি যে শুধরে নিয়েছিলেন, তা দেখানো হয়নি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তিনি ওই কথা বলেননি বলে দাবি করেন রবীন্দ্রনাথবাবু।

কোচবিহারের মহকুমাশাসক বিকাশ সাহা বলেন, “রবীন্দ্রনাথবাবুর নোটিসের উত্তর আমরা পেয়েছি। তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “ওই নোটিসের জবাব আমি দিয়ে দিয়েছি।” বিরোধী দলগুলি অবশ্য রবীন্দ্রনাথবাবুর ভুল স্বীকার নিয়েও সমালোচনা করেছেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “প্রচারের সুবিধে নিতেই রাজ্য সরকারের প্রার্থী বলে তৃণমূল প্রার্থীকে ঘোষণা করা হয়। প্রচার নিয়ে নেওয়ার পরে এখন ভুল স্বীকারের কথা বলা হচ্ছে।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সাধারণ সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “পরিকল্পনা করেই ওই কথা বলে প্রচার চালানো হয়েছে বলে আমরা মনে করি। মানুষই এর জবাব দেবে।”

Advertisement

রবিবার সকালে কোচবিহার পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডে ভোট প্রচারে বেরিয়ে রবীন্দ্রনাথবাবু এলাকার মানুষের বাড়িতে গিয়ে বলেন, “রাজ্য সরকার পুরসভার উন্নয়নে টাকা দেয়। সেই রাজ্য সরকারের প্রার্থী পলান (বিশ্বনাথ দে)। ইয়ং ছেলে। তাঁকে জোড়াফুল চিহ্নে ভোট দেবেন।” সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “এই ভোটটা উন্নয়নের ভোট। লোকসভার, বিধানসভার ভোট আলাদা। যে দলের কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে, যে দল রাজ্যে সরকারের আসনে রয়েছে, যে দলের পুরমন্ত্রী রয়েছেন। সেই দলের প্রার্থীকেই ভোটটা দেওয়া উচিত। অন্য কাউকে দিলে ভোটটা নষ্ট হবে। এলাকার উন্নয়ন থমকে যাবে। অন্য প্রার্থী জিতলে বলবে আমাদের দল ক্ষমতায় নেই, আমরা পুরবোর্ডে নেই। কী করে উন্নয়ন করব? সে জন্যই বলছি আমাদের প্রার্থীকে জেতান।” এর পরেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর পুরসভার এ বারের প্রার্থী সিপিএমের মহানন্দ সাহা রবীন্দ্রনাথবাবুকে গ্রেফতারের দাবি জানান।

গত ৩ এপ্রিলও কোচবিহারে এক কর্মিসভায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সামনে ভোটে জিততে দলীয় প্রার্থীদের প্রশাসনিক সহযোগিতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন রবীন্দ্রনাথবাবু। তিনি বলেন, “হাত জোড় করে বলছি, সবাই মিলে এক সঙ্গে এককাট্টা হয়ে জোড়াফুল চিহ্নে ভোটটা দেবেন এবং করাবেন। ভোট করার জন্য প্রশাসনিক এবং অন্য যে সব মদত প্রয়োজন হবে, সব করব। পঞ্চায়েতে করেছি, লোকসভায় করেছি। যে কোনও সাহায্য করব। কিন্তু জিততে হবে। জেতার জন্য যা যা দরকার তাই তাই করতে হবে।” পরে বক্তব্য দিতে উঠে অবশ্য পার্থবাবু জানিয়ে দেন, কোনও প্রশাসনিক মদত তাঁরা দেবেন না। ওই বক্তব্যের পরেই নির্বাচন কমিশন রবীন্দ্রনাথবাবুকে নোটিস পাঠায়। তাঁর উত্তর গত সোমবার তিনি দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন