ভিড় ট্রেনে আনা হল বস্তাবন্দি দেহ, ক্ষোভ

যাত্রী ঠাসা ট্রেনের কামরায় রক্তাক্ত দেহ চাপিয়ে স্টেশনে নিয়ে গেল রেল পুলিশ। তা নিয়েই ক্ষোভ উগরে দিলেন যাত্রীরা। সোমবার সকালে বেলাকোবা স্টেশন লাগোয়া এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৬ ০২:৪৬
Share:

ট্রেনের কামরায় এমনভাবেই রাখা ছিল মৃতদেহটি। — নিজস্ব চিত্র

যাত্রী ঠাসা ট্রেনের কামরায় রক্তাক্ত দেহ চাপিয়ে স্টেশনে নিয়ে গেল রেল পুলিশ। তা নিয়েই ক্ষোভ উগরে দিলেন যাত্রীরা।

Advertisement

সোমবার সকালে বেলাকোবা স্টেশন লাগোয়া এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়। ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু হলে ময়নাতদন্ত করাতে হয় রেল পুলিশকে। এ দিন সকালে হলদিবাড়ি থেকে এনজেপিগামী ডেমু ট্রেন থামিয়ে যাত্রী ঠাসা কামরাতেই লাইনে পড়ে থাকা রক্তাক্ত দেহ তুলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ. বেলাকোবা থেকে দুই স্টেশন দূরে এনজেপিতে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় ট্রেনের কামরায়. কামরাতে রক্তাত দেহ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শিশুরা. যাত্রীদের কেউ কেউ অসুস্থ বোধ করতে থাকেন. ট্রেনের কামরার এক কোণায় সব্জি বোঝাই ঝুরি বস্তা থাকে. দেহ থেকে রক্ত গড়িয়ে সব্জির বস্তাতেও মাখামাখি হয়ে যায় বলে অভিযোগ. ক্ষুব্ধ যাত্রীরা এনজেপি স্টেশনে পৌঁছে ক্ষোভে ফেটে পড়েন. বেশ কিছুক্ষণ ট্রেন দাঁড় করিয়ে ক্ষোভও দেখান তাঁরা.

গোটা ঘটনায় জিআরপি কর্তারা মুখে কুলুপ আটলেও রেলের তরফে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে. ঠিক কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হযেছে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের তরফে. রেলের এনজিপির সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থসারথী শীল বলেন, ‘‘এমন ঘটনা কল্পনাই করা যায় না। ট্রেনে যদি দেহ তুলতে হয় তার জন্য গার্ডের কামরা বা নির্দিষ্ট ফাঁকা রেক রয়েছে। যাত্রী বোঝাই কামরায় দেহ তোলার কোনও প্রশ্নই নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

Advertisement

রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে বেলাকোবা স্টেশন লাগোয়া ১৩ নম্বর পয়েন্টের কাছে এক যুবকের রেলে কাটা পড়ে মৃত্যু হয়. রেল পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম রূপচাঁদ রায় (৩৯). কিছু পরেই ওই লাইন দিয়ে হলদিবাড়ি এনজেপি প্যাসেঞ্জার ট্রেন আসে. প্রতিদিনের মতো এ দিনও হলদিবাড়ি থেকে শিলিগুড়িগামী ডেমু ট্রেন ছিল ভিড়ে ঠাসা. যাত্রীদের অভিযোগ, বেলাকোবা স্টেশন ছাড়ার কিছু পরেই ট্রেনটিকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়. রেল পুলিশের অফিসাররা এসে ট্রেনের প্রথম দিকের একটি কামরায় ওঠেন. সেই কামরাতে তোলা হয় একটি রক্তাত দেহ. প্রথমে যাত্রীদের কয়েকজন ভেবেছিলেন জখম কাউকে ট্রেনে তোলা হচ্ছে. কামরার শেষ প্রান্তে দেহ শুইয়ে দেওয়া হয়. কিছু পরেই দেহ থেকে রক্ত গড়াতে শুরু করে বলে অভিযোগ.

বসার জাযগা না পেয়ে যাত্রীদের অনেকেই শেষের দিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন. তাঁরা ভয়ে সরে যান. শিউরে ওঠেন যাত্রীদের কয়েকজন. হুলুস্থুল পড়ে যায়. ট্রেনে থাকা শিশুদের অনেকে ভয়ে কেঁদেও ফেলে. যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন ব্যাঙ্ক কর্মী গৌতম গুহরায়. তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘আমরা প্রথমে আপত্তি জানাই। রেল পুলিশের অফিসাররা উল্টে ধমকানো শুরু করেন। বেলাকোবা থেকে এনজেপি প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট ধরে রেল যাত্রা যেন ভয়ঙ্কর হয়ে থাকল।’’

ট্রেন এনজেপি পৌঁছনোর পরে যাত্রীরা গার্ড এবং রেলকর্মীদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। ইংরেজি এবং বাংলায় অভিযোগ লিখে রেলকে জমা দেওয়া হয়। জলপাইগুড়ির বাসিন্দা শিক্ষিকা বনানী দেব বলেন, ‘‘চোখ বুজলেই সেই দৃশ্য ভেসে আসছে।’’

পুলিশের দাবি, মরদেহ নিয়ে যাওয়ার গাড়ি সেতু পেরিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি বলেই ট্রেনে দেহ তোলা হয়। রেল পুলিশের এনজেপির আইসি স্বপন সরকার বলেন, ‘‘কী হয়েছিল, এখনই কিছু বলতে পারছি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন