বিপন্ন: উদ্বেগে ভেঙে পড়েছেন আহত নেতার স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।
আগের দিন সন্ধের ঘটনার পর সোমবার সকাল থেকেই ভুটকি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে বিন্নাগুড়ির বলরাম এলাকায় গুলিবিদ্ধ নেতার বাড়িতে লোকজনের ভিড়। সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন তৃণমূল নেতা মহম্মদ সলেমান। নার্সিংহোম থেকে মাঝেমধ্যেই খবর আসছে, তাঁর শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। স্ত্রী সামিনা বেগম উঠোনে বসে অঝোরে কাঁদছেন। নার্সিংহোম থেকে এ দিন সন্ধ্যায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে নেওয়া হয়েছে ওই নেতাকে।
সলেমানের স্ত্রী বলেন, ‘‘সকালে উঠে চা খেয়ে বেরিয়েছিল। ফিরে এসে কাটা ধান ঢাকার ব্যবস্থা করল। ফোনে কতজন কথা বলে। চিৎকার করে কথা বলা ওর অভ্যাস। তখন তো কিছু মনে হয়নি। সন্ধ্যায় বলে গেল, বিয়েবাড়ি যাবে, উপহার কিনতে যাচ্ছে। সবার উপকার করত। কে আমার এমন সর্বনাশটা করল!’’
সামিনা ছেলের সঙ্গে নিজেদের গাড়িতে অন্য একটি বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানেই ছেলের ফোনে ঘটনার খবর পেয়ে বিয়েবাড়ি থেকে ফিরে আসেন। এ দিন তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলেন রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়।
তৃণমূলের শুরু থেকেই দলের সঙ্গে আছেন মহম্মদ সলেমান। তিনি বলরাম বুথের এসসিএসটি সেলের সভাপতি বলেও দাবি ঘনিষ্ঠদের। দীর্ঘদিন তৃণমূল করার সুবাদে এলাকায় তাঁর পরিচিতি রয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০০৮ এবং ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করা হলেও জিততে পারেননি। পরিবারের দাবি, এলাকায় তিনবিঘা জমিতে তাঁর একটি চা বাগান রয়েছে। তা ছাড়া, কৃষিজমি চার বিঘায় চাষ-আবাদ করেন। জমির কারবারেও যুক্ত তিনি।
পরিবার এবং স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, লটারির টিকিট কেনার নেশা ছিল প্রচণ্ড। এলাকার চা এবং খাবার হোটেলের ব্যবসায়ী ক্ষীরোদ পোদ্দার বলেন, ‘‘প্রায় প্রতিদিনই সন্ধের দিকে বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার বাইকে গন্ডার মোড়ে আসেন। প্রচুর টাকার লটারির টিকিট কেনেন। আমার দোকানে এসে চা খান প্রতিদিন।’’ স্থানীয়দের একাংশের দাবি, এলাকার প্রচুর জমি নামে বেনামে রয়েছে তাঁর। জমি কেনাবেচা করেন। বাড়িতে দুটি বাইক একটি চার চাকার গাড়িও রয়েছে। দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সলেমানরা ছয় ভাই। তাঁরা আশপাশেই থাকেন পরিবার নিয়ে।
রবিবার সকাল থেকে সলেমান কোনও ঝামেলার মধ্যে ছিলেন বলে দাবি পরিবারের একাংশের। তাঁর দাদা আলহাস কাজিমুদ্দিন বলেন, ‘‘কেন এমন ঘটল বুঝতে পারছি না। রবিবার সকালে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। কিছু একটা বলবে মনে হচ্ছিল। কিন্তু বলেনি। এরপর সন্ধেয় শুনলাম এই ঘটনা।’’
রাজগঞ্জের বিধায়ক বলেন, ‘‘কেন এমনটা হল পুলিশকে দেখতে বলেছি। দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে হবে।’’