রাশিয়ায় মনে পড়ে বাংলার শরৎ

ডুয়ার্সের পথ ধরে কালিম্পঙের লাভা-লোলেগাঁও যাওয়ার রাস্তা। কোচবিহারের সেই স্মৃতি সব যেন মিলেমিশে একাকার চিকিৎসক কমলেশ সরকারের কাছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৮ ০১:৫৫
Share:

উৎসাহ: রাশিয়ায় ব্রাজিলের সমর্থকেরা। নিজস্ব চিত্র

আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। ভেসে বেড়াচ্ছে সেন্ট পিটার্সবার্গের আকাশে। যেমনটা হয় আমাদের শরৎকালে। শিরশিরে একটা হাওয়া যেন মন উদাস করে দেয়। মনে হয় যেন বসন্তকাল। রাস্তায় সার বেঁধে পাইনের সারি। অনেকটা ডুয়ার্সের পথ ধরে কালিম্পঙের লাভা-লোলেগাঁও যাওয়ার রাস্তা। কোচবিহারের সেই স্মৃতি সব যেন মিলেমিশে একাকার চিকিৎসক কমলেশ সরকারের কাছে।

Advertisement

দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রাজিলের সমর্থকদের উল্লাস। ড্রাম সেটের তালে তালে কেউ নেচে উঠছেন। কেউ পতাকা হাতে ছুট দিচ্ছেন এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। জয়ের আনন্দে উদ্বেলিত তাঁরা। ব্রাজিলের সমর্থকরা সুর বেঁধে ধরছেন তাঁদের জাতীয় সঙ্গীত। সবাই দাঁড়িয়ে এক আবেগে যেন একাত্ম হয়ে যাচ্ছেন। ‘জনগণমণ অধিনায়ক’ মনে এসে যাচ্ছিল কমলেশবাবুদের।

কমলেশবাবু বলেন, “সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল। কখনও কখনও আমার শহরের কথা মনে পড়েছিল। আসলে ক্ষণিকেই এখানে যেন সব বদলে যায়। আমাদের ওখানে বর্ষাকাল। বৃষ্টির কথা মনে পড়ছিল। সকালে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেল। আবার বিকেলেই রোদ।”

Advertisement

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার খেলা মানেই সারা বাংলার সঙ্গে নেচে ওঠে কোচবিহার। এদিনও কোনও খামতি ছিল না তার। সকাল থেকেই দোকানে ভিড় পড়ে গিয়েছিল। কেউ পতাকা কিনছে তো জার্সি। বিকেলের পর থেকে এক উদ্মাদনা। সবাই তখন অপেক্ষায় কখন খেলা শুরু হবে। আবার আকাশের দিকেও চোখ চলে যায় সবার। যদি বৃষ্টি নামে, যদি বিদ্যুৎ চলে যায়। আবার প্রার্থনায় বসে যায় কেউ কেউ। এ তো ফি বছরই হয়। বলতে বিশ্বকাপ যখন হয় সেই সময়। তার কোনও হেরফের নেই। সেই সব কথা বিলক্ষণ মনে পড়ে তাঁর।

বিশ্বকাপে রাত জেগে খেলা দেখা প্রায় নিয়ম হয়ে যায়। খুব বড় অসুবিধে না হলে খেলা কেউই মিস করেন না। কমলেশবাবু জানালেন, তিনিও খুব জরুরি কাজ না থাকলে খেলা মিস করতেন না। বিশেষ করে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার খেলা তো নয়ই। এ বারেই প্রথম বিশ্বকাপ দেখতে বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে আছেন মধুসূধন সাহা নামে কোচবিহারের আরেক বাসিন্দা। কাছ থেকে বসে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা থেকে শুরু করে জার্মানি, পর্তুগাল, স্পেন সহ একাধিক দলের খেলা দেখে খুশি তাঁরা। আর্জেন্টিনা হেরে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই খারাপ লেগেছিল তাঁদের। যেমনটা আর পাচজন বাঙালির লেগে থাকে। ব্রাজিলের জয় সেই খারাপ লাগা ভুলিয়ে দিয়েছে।

খানিকটা হাসতেই হাসতেই কমলেশবাবু জানিয়ে দেন, তিনি ব্রাজিলেরই সমর্থক। তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামতে শুরু করেছে। পাইনের সারির ভিতর থেকে উঁকি দিচ্ছে এক মায়াময় আলো। কমলেশ জানান, “জার্নি শেষ। এবারে দেশে ফেরার পালা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন