বান্ধবীদের হাত ধরেই স্কুলে যাতায়াত

শুনে শুনেই পড়াশোনা, উচ্চমাধ্যমিক দিচ্ছে সাবেরা

জন্ম থেকেই অন্ধ। পারিবারিক অবস্থাও স্বচ্ছল নয়। বাবা দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু তাতে কী?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৭ ০২:২২
Share:

•পরীক্ষার্থী: রাইটারের (বাঁ দিকে) সাহায্য নিয়ে কালিয়াচকের রাজনগরের সাবেরা খাতুন এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন। নিজস্ব চিত্র

জন্ম থেকেই অন্ধ। পারিবারিক অবস্থাও স্বচ্ছল নয়। বাবা দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু তাতে কী?

Advertisement

লেখাপড়ায় কখনওই ছেদ পড়েনি কালিয়াচকের রাজনগরের সাবেরা খাতুনের। পাশের বাড়ির জুলেখা খাতুন তাঁকে বরাবর সাহায্য করেছেন। রোজ বইয়ের পাতা পরপর পড়ে যেতেন জুলেখা। সে সব শুনতেন সাবেরা। এটাই সাবেরার পড়া। জুলেখা তাঁকে একদিন ইতিহাস পড়ে শুনিয়েছেন। তাতে প্রশ্ন জাগলে সাবেরাকে সেই উত্তরও জুগিয়েছেন এক ক্লাস নীচের জুলেখাই। শুনে শুনে প্রশ্নের উত্তর তৈরি করেছেন সাবেরা।

মনের এই অদম্য জেরে অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছেন সাবেরা। স্কুল পরীক্ষাগুলির পাশাপাশি রাইটারের সাহায্য নিয়েই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে প্রথম বিভাগে পাশও করেন। এ বার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছেন। রাইটার নিয়েই পরীক্ষা দিচ্ছেন। জন্মান্ধ এই ছাত্রী সাবেরা খাতুনকে নিয়ে গর্বিত কালিয়াচকের রাজনগর।

Advertisement

কামদিটোলা স্কুলের ছাত্রী সাবেরার আসন সিট পড়েছে বৈষ্ণবনগর হাই স্কুলে। বুধবার ছিল এডুকেশন পরীক্ষা। সাবেরা জানিয়েছেন, এ দিন পরীক্ষা ভালই হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজনগরের বাসিন্দা তলসিম শেখ ও হামেদা বিবির ৬ সন্তান। তিন মেয়ে ও তিন ছেলে। সাবেরা মেয়েদের মধ্যে ছোট। বাকি দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। জন্ম থেকেই অন্ধ সাবেরা। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি থেকে আধ কিলোমিটারের মধ্যেই স্কুল। পাড়ার বান্ধবীরাও তাঁকে সাহায্য করেছেন। পঞ্চম শ্রেণি থেকে পাড়ার বান্ধবীদের হাত ধরেই প্রতিদিনই সে স্কুলে যাতায়াত করে।

পরীক্ষা অবশ্য তিনি রাইটারের সাহায্য নিয়েই দিয়ে আসছেন। স্কুলে প্রথম তিনে না থাকলেও বরাবরই ভাল ফল করতেন। মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশও করেন। এ বার তাঁর পরীক্ষার সিট পড়েছে বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূর বৈষ্ণবনগর হাই স্কুলে। অন্য বান্ধবীদের সঙ্গে ভাড়া করা গাড়িতে করেই গিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন।

সেই পরীক্ষার প্রস্তুতিতেও এগিয়ে এসেছেন ছোট ব্যবসায়ী ইব্রাহিম শেখের মেয়ে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী জুলেখা।

সাবেরা জানিয়েছেন, বড় হয়ে তাঁর শিক্ষিকা হওয়ার ইচ্ছে। কামদিটোলা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু তালেব বলেন, ‘‘সাবেরাকে আমরা সব সময়ই লেখাপড়ায় উৎসাহ দিচ্ছি ঠিকই। কিন্তু দৃষ্টির বিঘ্ন সত্ত্বেও লেখাপড়ায় ওর নিজের উৎসাহ খুব। তাই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এগিয়ে যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন