আলমগির ও সাইনা। — নিজস্ব চিত্র।
বাবা ক্ষুদ্রচাষি। যৎসামান্য জমিই ভরসা তাঁদের। এই প্রতিকূলতার মধ্যে মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষায় রাজ্যে সম্ভাব্য ষষ্ঠ হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মালদহের রতুয়ার বাটনা হাই মাদ্রাসার ছাত্র মহম্মদ আলমগির আলম। ৮টি বিষয়েই ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে সে। তার বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বর হল— বাংলায় ৮১, ইংরেজিতে ৮৭, অঙ্কে ৯৭, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৩, জীবন বিজ্ঞানে ৯৩, ইতিহাসে ৯২ ও ভূগোলে ৯১ ও ইসলাম পরিচয় বিষয়ে ৯২ নম্বর পেয়েছে। ওই মাদ্রাসা থেকে এ বছরই প্রথম কেউ মেধা তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে বলে জানা গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের পাশাপাশি এলাকাতেও খুশির হাওয়া। তবে ভাল ফল করলেও কী ভাবে তার পড়াশুনা চলবে তা নিয়ে বাবা নুরুল হোদা, মা নাজেমা বিবি। সামসি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বোমপাল এলাকায় বাড়ি। চার ভাইবোনের মধ্যে ছোট আলমগির। এক কিলোমিটার দূরে মাদ্রাসায় প্রতিদিন হেঁটে যাতায়াত করতে হয় তাকে। বিজ্ঞান ছাড়া আর কোনও বিষয়ে টিউশন পড়তে পারেনি সে। চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে তার। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু চৌধুরী বলেন, ‘‘আলমগির ক্লাসে বরাবর প্রথম হত। অত্যন্ত মেধাবী ও লাজুক প্রকৃতির ছিল। সে ভাল ফল করবে বলে আমরা আশা করেছিলাম। তবে এতটা আশা করিনি। সে মাদ্রাসার মুখ উজ্জ্বল করেছে। ওকে দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে। ওকে সব রকম সাহায্য করা হবে।’’
আলমগিরের মতো আর্থিক প্রতিকূলতাকে জয় করে সফল হয়েছে পুরাতন মালদহের যাত্রাডাঙায় প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা সাইনা খাতুন। রাজ্যের মধ্যে সম্ভাব্য নবম হয়েছে সে। পুরাতন মালদহের যাত্রাডাঙা কে.বি. হাই মাদ্রাসার ছাত্রী সাইনা। তার বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বর বাংলায় ৮৯, ইংরেজিতে ৮৭, অঙ্কে ৮২, ভৌতবিঞ্জানে ৯২, জীবন বিজ্ঞানে ৯৫, ইতিহাসে ৮৮, ভূগোলে ৯৫ এবং ইসলামিক বিষয়ে ৮৭। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সাইনার বাবা মহম্মদ মহিদুর আলি মুম্বইয়ে শ্রমিকের কাজ করেন। বছরে দু’বার বাড়িতে আসেন। যৎসামান্য আয়ে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে হয় সামসেরা বিবিকে। তাঁর দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে সাইনা বড়। সম্ভাব্য নবম হলেও ফলাফল আরও ভাল হত বলে আশাবাদী ছিল সাইনা। তার কথায়, ‘‘ইংরেজি, অঙ্ক এবং ইতিহাসে আরও নম্বর পাব বলে আশা করেছিলাম। আমার এই ফলাফলের পিছনে স্কুলের শিক্ষকেরা খুব সাহায্য করেছেন। আমি আরও পড়তে চাই। বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা করে শিক্ষিকা হতে চাই। জানি বাবা-মায়ের পক্ষে আমাকে পড়াতে খুব কষ্ট হবে। তবে আমি আরও পড়াশুনা করে বাবা-মায়ের কষ্ট দুর করতে চাই।’’ মা সামসেরা বিবির আক্ষেপ, ‘‘মেয়ে দু’জনের কাছে টিউশন পড়ে। গৃহশিক্ষকদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারেনি। আমাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় শিক্ষকেরাও বেতনের জন্য কোনও দিন চাপ দেননি। স্কুল থেকেও পড়াশুনায় সাহায্য পেয়েছে। দেখা যাক মেয়ের পড়াশোনার জন্য কী করতে পারি।’’ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের মালদহ জেলা আধিকারিক আশিফ ইকবাল বলেন, ‘‘জেলাতে পাশের হার বেড়েছে। তবে মেধা তালিকার ক্ষেত্রে ফলাফল গতবারের তুলনায় একটু খারাপ হয়েছে। এ বারও এই জেলা এক থেকে দশের মধ্যে দু’টি স্থান ধরে রেখেছে।’’ এ বার পাশ করেছে ৭৮ শতাংশ। গত বছর জেলায় পাশের হার ছিল ৭৪ শতাংশ। এ দিকে, সাইনার সাফল্যে খুশি গ্রামবাসী ও শিক্ষকেরাও। যাত্রাডাঙা কে.বি হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ‘‘আমারা সাইনার জন্য গর্বিত। সে ভাল ফল করবে আমরা জানতাম। পঞ্চম থেকেই সে প্রথম হয়ে আসছে। তাদের যা আর্থিক অবস্থা, এই ফলাফল চোখে জল এনে দেয়। আমরা তার পাশে রয়েছি।’’