জঞ্জালে বন্ধ সান্দাকফুর ঝোরা

কোথাও পাহাড়ি ঝোরার গতিপথ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে চিপস-গুটকার স্তূপে। কোথাও ডাঁই হয়ে রয়েছে প্লাস্টিকের রাশি রাশি বোতল।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৫৫
Share:

সান্দাকফুর পথে সাফাই। —নিজস্ব চিত্র।

কোথাও পাহাড়ি ঝোরার গতিপথ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে চিপস-গুটকার স্তূপে। কোথাও ডাঁই হয়ে রয়েছে প্লাস্টিকের রাশি রাশি বোতল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২ হাজার ফুট উচ্চতায় এমন আবর্জনার স্তূপ শুধু দৃশ্যদূষণই করছে না, উষ্ণায়নেও ইন্ধন জোগাচ্ছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। সম্প্রতি মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু পর্যন্ত পায়ে হেঁটে আবর্জনা কুড়িয়েছেন হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন বা ন্যাফের সদস্যরা। হাতের কাছে যা পেয়েছেন, তাতে ভর্তি হয়ে গিয়েছে বিরাট বিরাট ২০টি বস্তা। আর যেখানে তাঁদের হাত পৌঁছনি? সেখানে এখনও জড়ো হয়ে রয়েছে আবর্জনার বিপদ।

Advertisement

এত দিন বছরে এক বার করে এই পথে আবর্জনা কুড়োতেন ন্যাফের সদস্যরা। সংস্থার কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘আমরা তো ৮ বছর ধরেই ‘ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন সিঙ্গালিলা’ নামে সাফাই অভিযান করছি।’’ তাঁদের অভিজ্ঞতায়, আগের তুলনায় এ বার সান্দাকফুর পথে আবর্জনা কিছুটা কম। অনিমেষ বলেন, ‘‘কিন্তু, রাস্তা থেকে নীচের খাদের দিকে তাকিয়ে অনেক জায়গায় প্লাস্টিক-সামগ্রীর স্তূপ দেখা গিয়েছে। বেশ কয়েকটি ঝোরার গতিপথ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’

সে সব আবর্জনা এমনই বিপজ্জনক জায়গায় পড়ে রয়েছে যে নেমে তা তুলে আনা অসম্ভব। এমনকী, অতটা নীচের ছবি তোলার মতো ক্যামেরাও ন্যাফের এই দলটির কাছে ছিল না। অনিমেষবাবু তাই বলেছেন, ‘‘এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারি-বেসরকারি দু’পক্ষকেই একযোগে কাজে নামতে হবে। না হলে সান্দাকফুর পথ আবর্জনা মুক্ত করা খুবই কঠিন।’’

Advertisement

১১,৯২৯ ফুট উঁচুতে অবস্থিত সান্দাকফুতে যাতায়াত করতে হয় রাজ্য বন দফতরের সিঙ্গালিলার সংরক্ষিত অরণ্যের মধ্যে দিয়ে। ইদানীং এই এলাকায় উপচে পড়ছে ট্রেকার ও পর্যটকদের ভিড়। তাঁরা অক্লেশে পথে প্লাস্টিকের বোতল, পাউচ, চিপসের প্যাকেট, গুটকার মোড়ক ফেলতে ফেলতে যান। আর সেই পথই প্রতি বছর বন দফতরের দার্জিলিং বন্যপ্রাণ বিভাগের সহযোগিতায় সাফ করে ন্যাফ।

গত ১৮ অক্টোবর ন্যাফের প্রবীণ সদস্য অরুণ দত্ত, জীবনকৃষ্ণ রায়ের নেতৃত্বে ১৭ জন সান্দাকফুর উদ্দেশে রওনা হন। তাতে সামিল হন কলেজ পড়ুয়া লিস রায়-সহ ৪ জন তরুণীও। যাতায়াতের পথে চিত্রে, লামেধুরা, মেঘমার মতো সব কটি লোকালয়ের বাসিন্দারাও ওই উদ্যোগে সামিল হন। ওই পথে যাতায়াতকারী পর্যটকদেরও ন্যাফের তরফে পাহাড়ি জঙ্গলের পথে কোনও প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য না ফেলার জন্য অনুরোধ করা হয়। তাতে যে পুরোপুরি কাজ হয় না, সেটা অবশ্য ৫ দিন ধরে বস্তা-বস্তা জঞ্জাল সংগ্রহের পরে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তাঁদের কাছে।

ওই অভিযানের নেতৃত্বে দিচ্ছেন অরুণবাবু। তিনি বলেন, ‘‘বেশ কয়েকটি জায়গায় আমরা খাদের দিকে তাকিয়ে দেখেছি, প্রচুর প্লাস্টিক বর্জ্য জমে রয়েছে। কোথাও ঝোরার পথ আটকে যাচ্ছে। এ সব সরাতে দড়ি বেয়ে ওঠানামা করতে হবে। তা অনেক সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ।’’ আবার বর্জ্য জমতে থাকলে পরিবেশের বিপদ যে বাড়বে, সেটাও মেনে নিয়েছেন তাঁরা। বলছেন, ‘‘এখান থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজতেই হবে। আবর্জনা সাফ করা তো দরকারই, একই সঙ্গে সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি।’’

কিন্তু সচেতনতা বাড়বে কি? থাকছেই প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন