শয্যায় তিল ঠাঁই নেই। মাটিতেও এক বিছানায় তিন জন। শিলিগুড়ি হাসপাতালে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
শহরের কয়েক হাজার বাসিন্দা ‘ভাইরাল ফিভার’-এ আক্রান্ত। কারও ৮০ হাজারে, কারও ৩০ হাজারে নেমে যাচ্ছে প্লেটলেট। বমি, পেটের অসুখ, জ্বরের উপসর্গ রয়েছে। ঠিক কী কারণে এ ধরনের জ্বর হচ্ছে, কোন ভাইরাসের জন্য ঘটছে, তা নিয়ে অন্ধকারে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। চিকিৎসকদের একাংশ জানান, তাঁদেরও অন্ধকারে হাতড়ে চিকিৎসা করছেন। অনেক ক্ষেত্রে ডেঙ্গি মিলছে। বাকিদের বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর শিলিগুড়ি পুরসভাকে জানিয়েছে, গত সাড়ে তিন মাসে শিলিগুড়ি শহরে ৬ হাজারের মতো বাসিন্দা ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসকদের ধারণা সংখ্যাটা ১০ হাজারের কাছাকাছি। এত ব্যাপক হারে কী ধরনের ভাইরাল জ্বর হচ্ছে তা জানতে পুণে ন্যাশনাল ইন্সস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি-তে রক্তের নমুনা পাঠিয়ে পরীক্ষা করে দেখা উচিত বলে হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশও মনে করছেন।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এখনও কোনও নমুনা পুণে বা কলকাতার ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠানো হয়নি। তবে কিছু নমুনা সংগ্রহ করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে চিকনগুনিয়া, টাইফয়েডের মতো রোগ সংক্রমণ হচ্ছে কি না দেখতে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, ‘‘ডেঙ্গি ছাড়াও ভাইরাল ফিভার হচ্ছে। খতিয়ে দেখতে প্রাথমিক ভাবে কিছু নমুনা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।’’
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শেখর চক্রবর্তী জানান, ডেঙ্গি ছাড়াও অন্য ভাইরাসের দরুণ প্লেটলেট কমে যাওয়া, জ্বর, গা ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এমন অনেক রোগী আসছেনও। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশে ওয়েস্টনাইলের মতো ভাইরাস থেকেও ঘটে। কী ধরনের ভাইরাসের জন্য তা ঘটছে ন্যাশনাল ইন্সস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে পাঠিয়ে পরীক্ষা করে দেখা দরকার।’’ তাঁর পর্যবেক্ষণ, গত দুই সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গি ছাড়া এ ধরনের জ্বরের প্রবণতা বেড়েছে। গোড়াতেই বিষয়টি খতিয়ে দেখলে রোগ প্রতিরোধের কাজে তা সহায়ক হবে।
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে জ্বরের রোগীদের ভিড় চলছেই। এ দিনও দুপুর পর্যন্ত জ্বর নিয়ে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে অন্তত ৫০ জন ভর্তি হয়েছেন। তবে পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন রোগীর লোকেরা। হাসপাতালে ভর্তি গোপাল দেবের প্লেটলেট ৮০ হাজারে নেমে গিয়েছে। তার ডেঙ্গি না অন্য ভাইরাল ফিভার তা স্পষ্ট নয়। জ্বর, মাথাব্যথা, পেট ব্যথা নিয়ে একতিয়াশালের বাসিন্দা ধর্ম রায়কে শনিবার রাতে ভর্তি করানো হয়। এ দিন বেলা ১২টা পর্যন্ত তাদের কোনও চিকিৎসক দেখতে আসেননি বলে অভিযোগ। রমেশ রায় দু’দিন ধরে ভর্তি। রমেশের মা ফুলতি দেবী, জানান, হাপাতালে মশারি না দেওয়ায় তাঁরা উদ্বেগে রয়েছেন।