বিকিকিনি: খদ্দের সামলাচ্ছে খুদেরা। নিজস্ব চিত্র
মিড-ডে মিলের বিরতিতে তখন হুটোপাটি স্কুল জুড়ে। তবে সেই ভিড়ে নেই চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছোট্টু বা আকাশ। তাদের তখন দোকান খোলার ব্যস্ততা। ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে ন’টা বাজতেই স্কুলের নির্দিষ্ট ঘরে থাকা বড় মাপের টিনের বাক্স খুলে চেয়ার-টেবিলের ওপর পসরা সাজিয়ে বসল তারা। সেটাই তাঁদের স্টল। পোশাকি নাম, ছাত্রবন্ধু সমবায়।
কী নেই সেখানে? খাতা-কলম, পেনসিল-রাবার-শার্পনার, স্কেচ পেন-রং পেনসিল, চকলেট-বিস্কুট, যে যেমনটা চায়। রয়েছে কার্টুনের ছোটা ভীম, স্পাইডারম্যান থেকে শুরু করে বাঘের মুখোশও।
পাঁচ টাকা হাতে নিয়ে কলম কিনতে স্টলে হাজির প্রথম শ্রেণির ছাত্র মীরজান হুসেন। তার হাতে কলম তুলে দিয়ে টাকা গুনে নিল আকাশ। হিসেবের খাতায় বিক্রির অঙ্ক টুকে রাখল ছোট্টু। পাঁচ টাকা দিয়ে ছোট খাতা কিনতে এসেছিল চতুর্থ শ্রেণির মেরিনা খাতুন, তৃতীয় শ্রেণির প্রতিমা রবিদাসরা। তাঁরাও দাম মিটিয়ে সে সব নিয়ে ফিরে গেল নিজেদের ক্লাসে। স্কুল খোলা থাকলে এখন এমনই কেনাবেচা চলছে হরিশ্চন্দ্রপুরের অর্জুনা জুনিয়র বেসিক প্রাইমারি স্কুলে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই এই স্কুলেরই কচিকাঁচা।
বিহার সীমান্ত লাগোয়া হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের মালিওঁর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকার এই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ২১০ জন। শিক্ষক পাঁচজন। তাঁরা জানান, একেবারে ছোট থেকে পড়ুয়াদের হাতে কলমে লেনদেনের বিষয়টি শেখাতে স্কুলে স্টল চালু হয়েছে। পড়ুয়ারা যাতে ন্যায্য মূল্যে খাতা কলম এ সব সংগ্রহ করতে পারেন সেটাও ভাবনায় ছিল। শিক্ষক সৌরভ মিশ্র বলেন, ‘‘স্কুলে কোনও প্রাচীর নেই। সামনে গিয়েছে ব্যস্ততম বারদুয়ারি-কুমেদপুর রোড। টিফিনে অনেক সময়েই ছোটরা চকোলেট বা বিস্কুট কিনতে রাস্তা পেরিয়ে বাইরের দোকানে যেত। স্টল চালুর পর সেটা বন্ধ হয়েছে। দুর্ঘটনার ঝুঁকিও কমেছে।’’
প্রধান শিক্ষক মহম্মদ জামালউদ্দিন বলেন, ‘‘সব শিক্ষকের টাকায় ৭০০ টাকার পুঁজিতে এই স্টল চালু হয়েছে। পড়ুয়ারাই হিসেব রাখে। জিনিসপত্র আমরা কিনে দিই। এখন সেই পুঁজি বেড়ে হাজার টাকা হয়েছে।’’
স্কুলে স্টল চালু হওয়ায় নিশ্চিন্ত অভিভাবকরাও। তাঁরা জানান, বাইরের থেকে অনেক কম দামে এখানে খাতা কলম মেলায় তাঁদেরও অনেকটাই সুবিধা হয়েছে।
হরিশ্চন্দ্রপুর দক্ষিণ সার্কেলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সৈকত ঘোষ বলেন,‘‘অর্জুনা জুনিয়র বেসিক প্রাইমারি স্কুলের মতো এমন ব্যবস্থা আমরা এলাকার অন্য স্কুলেও চালু করতে উদ্যোগী হব।’’