ডাইন অপবাদে ঘরছাড়া সাত

দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার বড়পুকুর গোফানগরের চক বলরাম এলাকায় সুকুরমণি টুডু, লক্ষ্মী মার্ডি, কবিরাজ মুর্মু সহ এই সাত জন মে-র শেষ সপ্তাহ থেকে ঘর ছাড়া।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৭ ০১:৪৫
Share:

ডাইনি অপবাদে চারটি পরিবারের সাত জনকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। তাঁর স্ত্রী এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য।

Advertisement

দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার বড়পুকুর গোফানগরের চক বলরাম এলাকায় সুকুরমণি টুডু, লক্ষ্মী মার্ডি, কবিরাজ মুর্মু সহ এই সাত জন মে-র শেষ সপ্তাহ থেকে ঘর ছাড়া। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এক জন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী, একজন নবম শ্রেণির। এই সাত জন বুধবার জেলাশাসকের দ্বারস্থ হন।

সুকুরমণিরা অভিযোগ করেছেন চতুর হেমব্রম, জলপা মার্ডি, দুমিন মার্ডি, বাবুলাল মার্ডি এবং মাইকেল টুডু এই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, এই পাঁচ জন সুকুরমণিদের ডাইন অপবাদ দিয়ে মাথা পিছু ১৬ হাজার টাকা ও এক মণ করে চাল দাবি করেছিলেন। দাবি আদায় না হলে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। তাই ওই সাত জন বাড়ি ছেড়ে পালান।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, টাকা ও জমির লোভেই এই সাত জনকে ডাইন অপবাদ দেওয়া হয়েছে। চতুর হেমব্রমের গ্রামে দাপট রয়েছে। এক সময় তিনি এলাকায় সক্রিয় সিপিএম কর্মী ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানাচ্ছেন। বছর খানেক আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। মাটির বড় বাড়ি। পাশেই কংক্রিটের বাড়িও তৈরি হচ্ছে। তাঁর স্ত্রী মাইতি টুডু এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য। মাইতি সিপিএমের টিকিটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখন দল পাল্টে তৃণমূলে তিনি।

এই গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। স্কুল রয়েছে। পাকা রাস্তাও রয়েছে। শিক্ষার হার ভালই। তবে স্থানীয় সূত্রে দাবি, গ্রামে ছড়ি ঘোরান চতুর ও তাঁর সঙ্গীরাই। যে কারণে, এই চারটি পরিবার পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়েও কোনও সুরাহা পাননি। ২৫ মে তপন থানায় চতুর সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পরেও কোনও ফল মেলেনি।

সুকুরমণি অভিযোগ করেন, ২৩ মে চতুরেরা তাঁর বাবা ও ভাইকে ঝাড়খণ্ডে নিয়ে গিয়ে ওঝা দেখান। ২৫ মে গ্রামে ফিরে তিন দিন ধরে চতুরের নেতৃত্বে বিচারসভা চালানো হয়। তাতেই ওই টাকা চাওয়া হয়।

এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রতিমন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদা বলেন, ‘‘জেলায় ডাইনি কুসংস্কার আছে। এখনও এক শ্রেণির বাসিন্দা ডাইনি প্রথা, তুকতাকে বিশ্বাস করেন।’’ তিনি জানান, এর আগেও এই এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানাভাবে প্রচার করা হয়েছে, আবারও সেরকম কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। বাচ্চু হাঁসদা বলেন, ‘‘ঘরছাড়াদের শীঘ্রই গ্রামে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’’

কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নেওয়ার পরেও কেন কোনও পদক্ষেপ হয়নি? তপন থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিষয়টি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তবে জেলা প্রশাসনের তরফে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়েছে। আইন মতো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন