গত বছর ডেঙ্গি আর জ্বরে রীতিমতো কেঁপেছে শিলিগুড়ি শহর। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার তাই আপাতত দ্বন্দ্ব সরিয়ে রেখে শিলিগুড়ি পুরসভাকে দিয়েই সমীক্ষা এবং প্রচারের কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। এখন ডেঙ্গির প্রকোপ নেই। তাই এই সময় থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে, মনে করছে দু’পক্ষই। সে জন্য ১৫ জানুয়ারি থেকে পাঁচ দিনের সমীক্ষা হয়েছে। এখন থেকে প্রতি মাসেই দু’দফায় এমন সমীক্ষা হবে। ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে স্থানীয় বাসিন্দা, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া, ক্লাব ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিদের সামিল করে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে পদযাত্রা হবে। তার দায়িত্ব ওয়ার্ড কমিটির।
দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য জানান, পুরসভার মাধ্যমেই সচেতনতা প্রচার এবং বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষও তৎপর। কলকাতা পুরসভা ডেঙ্গি প্রতিরোধে কী কী কর্মসূচি নিচ্ছে, সেই তালিকা আগেই চেয়ে এনেছেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। সেই মতো শিলিগুড়ি পুরসভার তরফে বিভিন্ন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মেয়র জানিয়েছেন, সঠিক ভাবে যাতে কাজ হয়, সে জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে ওয়ার্কশপেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে খবর, শহরের কোন কোন এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিচ্ছে, তার মানচিত্র তৈরি করে মশার লার্ভা মারতে স্প্রে ছড়ানো হবে। ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে নির্মাণ কাজের জায়গায়, ফাঁকা জমিতে বা বাড়ির ছাদে কোথাও জল জমে রয়েছে কি না, সে দিকেও নজরদারি চালানো হবে। এপ্রিল মাস থেকে রোগের প্রকোপ বাড়ে বলে ওই মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিটি ওয়ার্ডে এলাকাভিত্তিক স্বাস্থ্যশিবির, সচেতনতা শিবির হবে।
এর পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত ৫০ জন উৎসাহীকে নিয়ে টিম তৈরি করা হবে। ওয়ার্ডে কোথাও জঞ্জাল বা ফাঁকা জমিতে আবর্জনা জমছে কি না, তাঁরাই পুরসভাকে জানাবেন। নির্মীয়মাণ বাড়িতে কোথায় জল জমে থাকলে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
গত বছর সরকারি হিসেবেই শিলিগুড়ি শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৩০০। বেসরকারি হিসেবে তা অনেক বেশি। মারা গিয়েছেন ১৩ জন, যাঁদের চার জনের দেহে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে বলে সরকারও মেনে নিয়েছে। এই অবস্থায় এ বার শুরু থেকে প্রতিরোধের কাজে না নামলে বিপদ আছে, বুঝতে পেরেছেন পুরসভা থেকে স্বাস্থ্য দফতর, সকলেই। এই সব কাজে পুরসভা ছাড়া যে গতি নেই, তা স্বাস্থ্য দফতর ভাল ভাবেই জানে। তাই প্রথম দফায় দু’পক্ষ সমঝোতা রেখে এগোচ্ছে। শিলিগুড়িবাসীদের অনেকেরই প্রশ্ন, পরে এই সমঝোতা ভেস্তে যাবে না তো!