গানে, নাচে শিলিগুড়ি বলল, ভাগ নয় বাংলা

এই শিলিগুড়িতে রাজনীতির কচকচানি নেই। কারও খবরদারি নেই। শুধু আছে, অখণ্ডতার বার্তা দিতে এক হওয়ার স্বপ্ন। একযোগে পথ চলা। একযোগে গান গাওয়ার দৃশ্য। লাঠিসোটা নয়, গিটার, মাদল, রবীন্দ্রসঙ্গীত, জাতীয় পতাকা হাতে সুরেলা মিছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০৩:৫০
Share:

জনজোয়ার: পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবির প্রতিবাদে শিলিগুড়িতে মিছিল। শুক্রবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

এ এক অন্য শিলিগুড়ি।

Advertisement

এই শিলিগুড়িতে রাজনীতির কচকচানি নেই। কারও খবরদারি নেই। শুধু আছে, অখণ্ডতার বার্তা দিতে এক হওয়ার স্বপ্ন। একযোগে পথ চলা। একযোগে গান গাওয়ার দৃশ্য। লাঠিসোটা নয়, গিটার, মাদল, রবীন্দ্রসঙ্গীত, জাতীয় পতাকা হাতে সুরেলা মিছিল। যা শুরু হয়েছিল বাঘা যতীন পার্কে। মিছিল যখন এয়ারভিউ মোড় হয়ে ফিরছে, লেজটা তখনও সেই পার্কেই রয়ে গিয়েছে। কারণ, দলে দলে মানুষ তখনও সেখানে হাজির হচ্ছেন মিছিলে যোগ দিতে।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টে থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে এমনই এক স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল হল শিলিগুড়িতে। তাতে অন্তত ৩০ হাজার বাসিন্দা সামিল হয়েছেন বলে উদ্যোক্তারা মনে করছেন।

Advertisement

পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের অবশ্য দাবি, হাজার পঞ্চাশেক লোক ছিল মিছিলে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ কথা জানান। বলেন, ‘‘এত বড় মিছিল আগে কখনও দেখেনি শিলিগুড়ি।’’ সম্প্রতি রামনবমীর সময়েও বড় মিছিল হয়েছিল শহরে। এই মিছিল তাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। গৌতম নিজে বা তৃণমূলের কোনও নেতাই মিছিলে যোগ দেননি। কারণ, তাঁরা চাননি কোনও রাজনীতির রং লাগুক।

এত বড় মিছিল আর খুচখাচ বিশৃঙ্খলা হবে না! জলের বোতল ছোড়া কিংবা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। শিলিগুড়ির সিপি নীরজকুমার সিংহ অফিসারদের নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে তা সামাল দিয়েছেন। মিছিলের শেষে পুলিশ কমিশনার বলেছেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ মিছিল হয়েছে। মিছিলকারীরা সহযোগিতা করেছেন। দুয়েক জন উন্মাদনায় ছোটাছুটি করলেও তা বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবেই মোকাবিলা করে সামাল দেওয়া হয়েছে।’’

বাংলা ভাগ রোখার স্লোগান তুলে মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। গত রবিবার সেই ডাকে হাজির হন দশ হাজারের বেশি মানুষ। এ দিন সেই রেকর্ড ছাপিয়ে গেল। ভিড়ের চোটে শহরের তিনটি প্রধান রাস্তার একটি লেন দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। স্কুলবাসগুলিকেও এক ঘণ্টা আগে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়।

এই স্বতঃস্ফূর্ত মিছিলে দেখা গেল, হাকিমপাড়ার বাসিন্দা পৃথ্বীরাজ দে লিফলেট বিলোচ্ছেন। বললেন, ‘‘কারা ডেকেছে, জানি না। শুধুমাত্র বাংলাকে এক রাখার জন্য মিছিল হবে বলে শুনে এসেছি।’’ গৃহবধূ রিঙ্কি ভট্টাচার্য জানালেন, ‘‘আজকে সকালেই হোয়াটসঅ্যাপে মিছিলের কথা শুনেছি। একাই চলে এসেছি।’’

মিছিলে ছিল ঘোষপুকুর চা বাদগান থেকে আসা আদিবাসী মাদল নাচের দল। চলেছে পথ নাটিকা। কোথাও আবার গান, বাংলার মাটি বাংলার জল। বাঁধাধরা স্লোগান ছিল না। আর তাতেই মাত শিলিগুড়ির রাজপথ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement