কখনও আসে সোজা, কখনও নেপাল ঘুরে

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, ঠিকাদারির কারবারের মতো বিষয় নিয়ে মাঝেমধ্যেই গুলি চলছে রায়গঞ্জ শহরে। জেলার বিভিন্ন এলাকা তো বটেই, শহরের দুষ্কৃতীদের হাতে অবাধে বেআইনি অস্ত্র চলে আসাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে বলে মনে করছে উত্তর দিনাজপুর জেলা পুলিশের একাংশ। রায়গঞ্জ শহরেও যে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে সে ব্যাপারেও পুলিশ নিশ্চিত। 

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু ও গৌর আচার্য

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:০৫
Share:

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, ঠিকাদারির কারবারের মতো বিষয় নিয়ে মাঝেমধ্যেই গুলি চলছে রায়গঞ্জ শহরে। জেলার বিভিন্ন এলাকা তো বটেই, শহরের দুষ্কৃতীদের হাতে অবাধে বেআইনি অস্ত্র চলে আসাতেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে বলে মনে করছে উত্তর দিনাজপুর জেলা পুলিশের একাংশ। রায়গঞ্জ শহরেও যে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে সে ব্যাপারেও পুলিশ নিশ্চিত।

Advertisement

কোন পথে আসছে এই অস্ত্র? তদন্তে নেমে পুলিশ বিভিন্ন পথের হদিশ পেয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে জেলার এক দিকে বিহার, অন্য দিকে বাংলাদেশ। নেপালও বিশেষ দূরে নয়। পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি, বিহার থেকে অস্ত্র ঢোকার প্রবণতা সব চেয়ে বেশি। তবে মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর হয়ে অস্ত্র আসছে বলেও সন্দেহ পুলিশের। নেপালের দিককেও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চাইছেন তাঁরা। পুলিশের ওই অংশ স্বীকারও করেছে, দীর্ঘদিন ধরেই বিহার থেকে চোরাপথে উত্তর দিনাজপুর জেলায় বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে। সেই তালিকায় পাইপগান ও ছ’ঘরা পিস্তল ছাড়াও অত্যাধুনিক নাইন ও সেভেন এমএম পিস্তলও রয়েছে। গত অগস্ট থেকে এখনও পর্যন্ত রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে একাধিকবার গুলি চলার অভিযোগ এসেছে। সেই সব ঘটনার তদন্তে নেমে এ সব তথ্যই হাতে এসেছে রাজ্য গোয়েন্দাদের।

গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, গত বুধবার রাতে রায়গঞ্জের শিলিগুড়িমোড় এলাকায় এক যুবককে গুলি করার অভিযোগে যে পাঁচ জনকে ধরা হয়, তাদের কাছ থেকে দু’টি নাইনএমএম পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। গত এক বছরে জেলার নয়টি থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫টিরও বেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। সেগুলির মধ্যে একাধিক অত্যাধুনিক ও দামী আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দাদের সন্দেহ, বেশির ভাগ আগ্নেয়াস্ত্রই এসেছে বিহারের মুঙ্গের থেকে। পড়শি রাজ্যের অন্য জায়গা থেকেও এসেছে কিছু অস্ত্র।

Advertisement

বিহার থেকে কোন পথে ঢুকছে অস্ত্র? পুলিশ এবং গোয়েন্দা সূত্রে খবর, আগ্নেয়াস্ত্রের অবৈধ কারবারিরা মুঙ্গের থেকে প্রথমে কাটিহার পর্যন্ত নিয়ে আসছে ওই সমস্ত অস্ত্র। সেখান থেকে কখনও বারসই হয়ে ইটাহারের পথে অস্ত্র ঢুকছে উত্তর দিনাজপুর জেলায়। কখনও আবার পূর্ণিয়া, বাহাদুরগঞ্জ হয়ে বিহারেরই কিসানগঞ্জে মজুত করা হচ্ছে অস্ত্র। পরে সুযোগ বুঝে সেখান থেকে ইসলামপুর মহকুমার চোপড়া, কানকি, চাকুলিয়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় সেই অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ছে। কখনও কাটিহার থেকে আগ্নেয়াস্ত্র সরাসরি ঢুকছে ইলামপুরের আলুয়াবাড়িতে।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, বিহার থেকে উত্তর দিনাজপুর জেলায় অস্ত্র পাঠানোর আর একটি পথ এসেছে নেপাল হয়ে। মুঙ্গের থেকে সে ক্ষেত্রে অবৈধ অস্ত্র চলে যাচ্ছে ভারত-নেপাল সীমান্তে বিহারের রকসৌলে। এর খুব কাছেই নেপালের বীরগঞ্জ। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, সেই পথেই নেপালে পাঠানো হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র। নেপাল হয়ে খদ্দেরের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আগে গলগলিয়া পথে তিনমাইলহাট বা ঠাকুরগঞ্জে আনা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র। ঠাকুরগঞ্জের কাছে রয়েছে পথিয়া। ওই জায়গাতেও অস্ত্র কারবারিদের আনাগোনা রয়েছে বলে দাবি পুলিশের। ওই সমস্ত এলাকা থেকে লাগোয়া ইসলামপুর, রামগঞ্জ চোপড়ায় ঢুকছে আগ্নেয়াস্ত্র।

জেলার পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘নানা পথেই আসছে অস্ত্র। আমাদের কাছে যে সব তথ্য রয়েছে, সেই মতো তল্লাশিও শুরু হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্র উদ্ধারও হচ্ছে।’’ কিন্তু কী ভাবে আনা হচ্ছে সেই সমস্ত অস্ত্র?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন