নর্দমাতেই লক্ষ্মীকে খোঁজেন ওঁরা

সোনার দোকানের ধার ঘেঁষে পাড়ার বসতি এলাকার এই নর্দমায় মন দিয়ে খুঁজলে নাকি সোনার ছোট্ট ছোট্ট গুঁড়ো পাওয়া যায়। দিনভর মন দিয়ে এই সোনাই খুঁজে চলেন ওঁরা।

Advertisement

সব্যসাচী ঘোষ

মালবাজার শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:৪৮
Share:

সন্ধানী: নর্দমায় সোনার গুঁড়োর খোঁজ। নিজস্ব চিত্র

নর্দমার ভিতরে নেমে কাদা জল তুলে এনে সেখান থেকে কী যেন একটা খোঁজেন তাঁরা। নিয়মিত এই ঘটনা ঘটতে গিয়ে বাসিন্দারা ব্যাপারটা বুঝতে দাঁড়িয়ে পরেছিলেন। আর বোঝার পরেই চমকে উঠলেন বাসিন্দারা। সোনার দোকানের ধার ঘেঁষে পাড়ার বসতি এলাকার এই নর্দমায় মন দিয়ে খুঁজলে নাকি সোনার ছোট্ট ছোট্ট গুঁড়ো পাওয়া যায়। দিনভর মন দিয়ে এই সোনাই খুঁজে চলেন ওঁরা। ওঁরা মানে লক্ষ্মী বাউরি, প্রতিমা রজকেরা। ওঁদের বাড়ি শিলিগুড়ি শহরের ঝংকার মোড়ে। এই একটি পেশার সঙ্গেই তাঁরা জড়িত। স্বামী, সন্তান নিয়ে শিলিগুড়ি থেকে ট্রেনে বা বাসে চেপে রওনা হয়ে যান ওঁরা। তারপর স্বামীরা বাচ্চাদের সামলান আর ওঁরা কাজ করেন।

Advertisement

কিন্তু নর্দমায় সোনার গুঁড়ো আসবে কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন খোদ স্বর্ণ ব্যবসায়ীরাই। মালবাজার শহরের বাজার রোড এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রদীপ রায় জানান এই পেশা দীর্ঘ দিনের। তিনি বলেন, “সোনার দোকানের থেকে সামান্য হলেও সোনার গুঁড়ো কোনও না কোনও ভাবে রাস্তায় চলে যায়, বৃষ্টির জলে ধুয়ে তা নর্দমার জলে গিয়ে পরে, ওঁরা সেই সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম সোনার গুঁড়োগুলিই খোঁজেন।” উল্লেখ্য সোনার দোকানগুলোতে দোকান পরিষ্কারের পর ধুলো বাইরে ফেলা হয় না। দোকানের ভিতরেই ধুলো জমিয়ে রাখার একটি ফুটো থাকে। সেই জমিয়ে রাখা ধুলো আবার বিক্রিও হয়। সেখান থেকেও সোনার গুঁড়ো বেরোয়। কিন্তু তারপরেও যে অতি সূক্ষ্ম পরিমাণে সোনা রাস্তায় চলে আসে সেই সোনাই নর্দমাতে খোঁজেন ওরা।

এ যেন নর্দমাতেই লক্ষ্মীর খোঁজ। কিন্তু অন্য কাজ ফেলে এই কাজ কেনো। কাজ করতে করতেই লক্ষ্মী বাউরি জানান তাঁর মা-ও এই একই কাজ করতেন, নর্দমার জল বাটিতে তুলে তারপর সেই জল ছেঁকে ছেঁকে দেখে আবার ফেলে দেবার এই কাজ তাদের ভালই লাগে। যেটুকু সোনার গুঁড়ো মেলে তা শিলিগুড়ির বাজারে সোনার দোকানে গিয়ে বিক্রি করেন বলেও জানান ওরা।

Advertisement

কিন্তু শিলিগুড়ি ফেলে মালবাজারে কেন? লক্ষ্মী, প্রতিমারা জানালেন শিলিগুড়ির ক্ষুদিরামপল্লি এলাকাতে অনেক সোনার দোকান, কিন্তু সেখানকার নর্দমাতে কাজ করার লোকও অনেক বেড়ে গেছে বলেই মালবাজারে কাজের সন্ধানে আসেন তাঁরা। সব দেখে শুনে তাজ্জব মালবাজারের বাসিন্দারাও। অজয় দাস, বিমান রায়রা এমন অদ্ভুত জীবিকা আগে কখনও দেখেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন