দোকানের ফাঁক দিয়ে কেনাবেচা

এ দিন রটে যায় অনীত থাপা এবং তাঁর অনুগামীরা শহরের দোকানপাট খোলাতে উদ্যোগী হবেন। তা শুনে ব্যবসায়ীদের অনেকেই দোকানের সামনে জড়ো হন।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

কার্শিয়াং শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:২৮
Share:

এক-ফাঁকে: দোকানের পাল্লা অল্প ফাঁক করেই ব্যবসা। মঙ্গলবার কার্শিয়াঙে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

মোর্চার স্থানীয় নেতা অনীত থাপাও বন্‌ধ তোলার পক্ষে মঙ্গলবার সওয়াল করায় পাহাড়বাসীরা আসা করছেন, বন্‌ধ তা হলে সত্যিই উঠতে পারে। এ দিন কার্শিয়াঙের পথে যাত্রী নিয়ে আনাগোনাও করেছে অনেক গাড়ি। জিরো পয়েন্টে গাড়িগুলিকে তল্লাশি করা হচ্ছে। সেখানে পুলিশকর্মীদের হিসেব, গত কয়েক দিন ধরেই দেড়শো দু’শো গাড়ি চলছে। মঙ্গলবারও চলে।

Advertisement

এমনকী, এ দিন রটে যায় অনীত থাপা এবং তাঁর অনুগামীরা শহরের দোকানপাট খোলাতে উদ্যোগী হবেন। তা শুনে ব্যবসায়ীদের অনেকেই দোকানের সামনে জড়ো হন। বাসিন্দারাও খোঁজ খবর শুরু করেন। কোনও কোনও দোকানের ঝাঁপ একটু আধটু খোলাও ছিল। রান্নার গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছ থেকে গ্রাহকদের কাছে সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। বাজারের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়েছিলেন অমন রাই, জ্ঞান সুব্বাদের মতো অনেকেই। তাঁরা অবশ্য নিরাশ হননি। আধ খোলা দোকান থেকে শাক, আনাজ পেয়েছেন। দর বেশি। কিন্তু তাও তাঁদের মুখে হাসি ধরছিল না। কেউ কেউ বলেন, ‘‘ঢ্যাঁড়শ, করলা সব ৮০ টাকা কিলো। বন্‌ধ থাকায় সেটাই কিনতে হল। বন্‌ধ যত দ্রুত উঠবে ততই ভাল।’’

রোহিণী থেকে কার্শিয়াং স্টেশন চত্বরে স্কোয়াশ বিক্রি করতে এসেছেন কালী ডোমার। বন্ধ দোকানের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে টুকরি করে তা বিক্রি করেন। ভিড় করে অনেকেই তা কিনেছেন। ভিম রাইয়ের মতো বাসিন্দারা বলেন, ‘‘রোজগার নেই। ১২ সেপ্টেম্বরের দিকে তাকিয়ে রয়েছি।’’

Advertisement

এদিন বন্‌ধ বিরোধী অনীতপন্থীরা দোকানপাট খোলাতে সক্রিয় হলে বাধা আসতে পারে ভেবে সেই মতো তৎপর ছিল পুলিশও। যাঁরা বাধা দিতে আসবেন, তাঁদের ধরপাকড়ের জন্য তৈরি ছিল বাহিনী। তবে অনীত জানিয়ে দেন, তিনিও শুনেছিলেন যে, তাঁর মিছিল ঘিরে বন্‌ধ ওঠার আশা তৈরি হয়েছিল। তিনি দোকান খোলাতে আসছেন, এমন কথাও চাউর হয়ে যায়। তবে অনীতের বক্তব্য, তিনি সেটা চান না। ব্যবসায়ী, বাসিন্দাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করবেন। তাঁরা যা চাইবেন, সেটাই হবে। অনীতের অনুগামীদের একাংশের দাবি ১২ সেপ্টেম্বর পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে ফের বৈঠক রয়েছে। তার আগেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে চান তাঁরা। সে ক্ষেত্রে বন্‌ধ তুলে জনজীবন স্বাভাবিক করতে কার্শিয়াংই পথ দেখাবে কি না, সেই প্রত্যশা ভাসতে শুরু করেছে।

এমনিতে ১৫ জুন থেকে টানা ৮৩ দিন চলা বন্‌ধে কোণঠাসা পাহাড়ের জনজীবন। ২৯ অগস্ট রাজ্যের ডাকা বৈঠকে বন্‌ধ ওঠার আশা করা হয়েছিল। দোকান খোলার চেষ্টাও হচ্ছে তখন থেকে। সোমবার পানিঘাটা, দুধিয়াতে দোকান খোলেন ব্যবসায়ীদের অনেকে। সেবক লাগোয়া এলাকা, সুকনায় অনেক দোকান খুলছেও। গুরুঙ্গ বন্‌ধ চালিয়ে যাওয়া নির্দেশে তাঁরাও কিছুটা হতাশ। তবে উত্তরকন্যার বৈঠকে সমস্যা মেটানোর পথেই সিদ্ধান্ত হবে বলে অনেকে মনে করছেন। সামনে পুজো। বাজার, অফিস খুললে পুজোর উদ্যোক্তারা চাঁদা পাবেন। তাই তাঁরাও চাইছেন বাজার খুলুক।

বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের টিউশন পড়ানো শুরু করছেন। বন্‌ধ উঠুক, তারাও চান। প্রশাসন সেই মতো উদ্যোগী কার্শিয়াঙে। কার্শিয়াঙের দায়িত্বে থাকা আইপিএস হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, তাঁরাও দোকান খোলাতে ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরাও চাইছেন দ্রুত বাজার খুলুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন