সেদ্ধভাত-কাঁচালঙ্কা-পিঠে-গরম জল

কারও মনোনয়নম জমা দেওয়া হয়ে গিয়েছে, কেউ আজ বা আগামীকাল দেবেন। রবিবার ছুটির দিনে এতটুকু সময় নষ্ট করতে রাজি নন কেউই। রাতে ভারতের খেলা। প্রার্থী থেকে ভোটার সকলেরই নজর ছিল সে দিকে। তা আঁচ করে সাতসকালে কেউ বাড়ি থেকে বের হলেন ফ্যান-ভাত খেয়ে কেউ বা গ্লাসে গুলে নিলেন ছাতু। কেউ টোটো চালানোর চেষ্টা করলেন, কেউ রোডশো-তে সময় বাঁচাতে হুডখোলা জিপ থেকে নেমে বাইকের পিছনে উঠে পড়লেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৬
Share:

কারও মনোনয়নম জমা দেওয়া হয়ে গিয়েছে, কেউ আজ বা আগামীকাল দেবেন। রবিবার ছুটির দিনে এতটুকু সময় নষ্ট করতে রাজি নন কেউই। রাতে ভারতের খেলা। প্রার্থী থেকে ভোটার সকলেরই নজর ছিল সে দিকে। তা আঁচ করে সাতসকালে কেউ বাড়ি থেকে বের হলেন ফ্যান-ভাত খেয়ে কেউ বা গ্লাসে গুলে নিলেন ছাতু। কেউ টোটো চালানোর চেষ্টা করলেন, কেউ রোডশো-তে সময় বাঁচাতে হুডখোলা জিপ থেকে নেমে বাইকের পিছনে উঠে পড়লেন। পদযাত্রা, ঘরোয়া সভা থেকে শুরু করে জোট শরিকদের সঙ্গে নিভৃতে বৈঠক, সবই চলল রবিবার। কোচবিহার থেকে মালদহ উত্তরবঙ্গের সাত জেলায় রবিবারের ভোট প্রচারের কিছু ঝলক।

Advertisement

প্রাতঃরাশ একই রইল

Advertisement

কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী মিহির গোস্বামীর দীর্ঘ দিনের অভ্যেস ফ্যানভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়া। রবিবার ছুটির দিনে প্রচারে দ্রুত বের হতে হবে। তবু অভ্যেস বদলাননি । সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে বের হলেন। তার আগে প্রাতঃরাশ সারলেন ফ্যানভাত, আলুসেদ্ধ এবং গোটা কয়েক কাঁচালঙ্কা দিয়ে। গুডফ্রাইডের পর এ দিন ছিল ইস্টার। তাই মালবাজারের সিপিএম প্রার্থী অগাস্টুস কেরকাট্টা পিঠে এবং চা খেয়ে শুরু করলেন প্রচার। নাগরাকাটার কংগ্রেস প্রার্থী জোসেফ মুন্ডা ফ্লাক্সে গরম জল নিয়ে প্রচারে বের হয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বক্তৃতা দিতে হচ্ছে, গলা সুস্থ রাখতেই হবে।’’

স্টিয়ারিঙে স্ট্রাইকার

রবিবার বিকেলে শিলিগুড়ির বর্ধমান রোডে পদযাত্রা শুরু করার আগে মাজারে গিয়ে চাদর চড়ালেন তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া। মৌলবীরা ভাইচুঙের জয়ের জন্য প্রার্থনাও করেন। সকালে কুমোরটুলির রাস্তায় পদযাত্রার সময়ে এক টোটো চালকের সঙ্গে কথা বলেন। ওই চালক তাঁকে টোটো চালানোর অনুরোধও করেন। ভাইচুং বিনা বাক্য ব্যয়ে টোটোর স্টিয়ারিং ধরেন। কিছু দূর চালিয়েও নিয়ে যান টোটো। এক তৃণমূল কর্মীর মন্তব্য, ‘‘ভোট তো কারও অনুরোধই ফেলা যাবে না।’’

জোট বৈঠক

মালবাজার বিধানসভা কেন্দ্রের জোট প্রার্থী সিপিএমের আগাস্টুস কেরকেট্টার প্রচারে গতি আনতে বৈঠক করলেন সিপিএম-কংগ্রেসের নেতা কর্মীরা। এ দিন প্রচারের ফাঁকে মালবাজার জোনাল সিপিএম অফিসে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে দশজনের কমিটি হয়েছে। আজ সোমবার সিপিএম প্রার্থী আগাস্টুস কেরকেট্টা মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। তার আগে মালবাজারে দুই দলের কর্মী-সমর্থকরা জড়ো হয়ে মিছিল করবেন।

গাঁদা ফুলের মালা

ইংরেজবাজারে পদযাত্রা দিয়ে এ দিন প্রচার শুরু করেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। পদযাত্রা শুরুর আগে তাঁকে গাঁদা ফুলের মালা পরিয়ে দেন কর্মী-সমর্থকরা। যত বারই কর্মী সমর্থকরা মালা পরিয়েছেন, তত বারই কোনও না কোনও পথচারীকে ডেকে নিজের গলার মালা খুলে পরিয়ে দিয়েছেন কৃষ্ণেন্দুবাবু। মালা পরিয়ে জোড় হাতে নমস্কার করেছেন। বলেছেন, ‘‘আপনাদের পাশেই আছি।’’

বাইক এবং মাদল

আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বরঞ্জন সরকার ঘাঘরা গ্যাস গোডাউন থেকে এক কংগ্রেস সমর্থকের বাইকে চেপে প্রচারে বের হয়েছিলেন। মোড়ে মোড়ে বাইক থামিয়ে নেমে পথচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, করমর্দন করেছেন। বঞ্চুকামারি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় স্থানীয় যুবকদের আবদার মেনে তাঁদের সঙ্গে সেলফিও তোলেন। তার পরে হুডখোলা জিপে চোড়ে রাখাল মাঠ পর্যন্ত রোড শো করেন। বিশ্বরঞ্জনবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী সৌরভ চক্রবর্তী এ দিন সকাল থেকেই সোনাপুর ও পাতলাখাওয়া এলাকায় প্রচার করেন। হঠাৎই এক সমর্থককে মাদল বাজাতে কাছে ডেকে নেন সৌরভবাবু। গলায় ঝুলিয়ে বেশ কিছু ক্ষণ মাদল বাজানও তিনি।

সূচ্যগ্র জমি

রবিবার সকালে শিলিগুড়ির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঝঙ্কার মোড় এলাকায় পদযাত্রা করেছিলেন ভাইচুং ভুটিয়া। ভাইচুঙের পদযাত্রা শেষ হতেই সেখানে হাজির সিপিএম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য। ওই একই পথে অশোকবাবু প্রচার করেন। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতা-সমর্থকরা। এলাকায় একটি নির্বাচনী বুথেরও উদ্বোধন করেন অশোকবাবু। বুথে ইন্দিরা-রাজীবের ছবি লাগানো হোর্ডিঙের নীচেই অশোকবাবুকে কাস্তে হাতুড়িতে ভোট দেওয়ার আবেদন রয়েছে।

কমরেড কংগ্রেস

রবিবার মাটিগাড়া-নকশালবাড়িতে পদযাত্রা করেন কংগ্রেস প্রার্থী শঙ্কর মালাকার। সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরাও ছিলেন মিছিলে। মাইক ছিল এক সিপিএম নেতার হাতেই। পদযাত্রায় কংগ্রেস প্রার্থী এগিয়ে চলেছেন তা বারবার মাইকে ঘোষণা করছিলেন ওই সিপিএম নেতাই। প্রতিবারই শঙ্করবাবুকে জোটের প্রার্থী কমরেড শঙ্কর মালাকার বলেই পরিচয় করিয়েছেন ওই সিপিএম নেতা। শঙ্করবাবু বা কংগ্রেস কর্মীরা অবশ্য তাতে আপত্তি করেননি। পরে ওই সিপিএম নেতার স্বীকারোক্তি, ‘‘অভ্যেস বলে কথা!’’

হাটের দিন

দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমণ্ডি, হরিরামপুর ও গঙ্গারামপুরের বিভিন্ন হাট সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোট প্রচারে সরগরম থাকল। জেলার বড় হাটগুলিতে ভোট প্রচারে জোর দেয় রাজনৈতিক দলগুলি। এ দিন কুশমণ্ডি কেন্দ্রের মহিপাল এলাকায় তৃণমূল মহিলা সমিতির ডাকে সভার পরে প্রার্থী রেখা রায়কে নিয়ে ভোট প্রচারে মহিলাদের মিছিল বের হয়। হরিরামপুরের দলের প্রার্থী বিপ্লব মিত্রের সমর্থনে যুব তৃণমূলের প্রচার মিছিল শুরু হলে পাশের বাগিচাপুর ও বৈরহাট্টা এলাকায় সিপিএমের তরফেও প্রচারসভা ও মিছিল করে দলের প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে জয়যুক্ত করার ডাক দেওয়া হয়। সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী নীলাঞ্জন রায়ের সমর্থনে আলাদা করে প্রচার সভা করে দলের কর্মী সমর্থকেরা। বাগিচাপুরে বিজেপির তরফে ভোট প্রচার হয়। হিলি এবং কুমারগঞ্জ ব্লকে পাড়া ও হাটে মিছিল করে বামফ্রন্ট।

বামেদের পাশে

কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষদস্তিদার এদিন ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী দিলীপ সিংহর সমর্থনে প্রচারে বের হয়েছিলেন। ফুলবাড়ি থেকে তিনবাত্তি মোড় পর্যন্ত মিছিলে হাঁটেন। অন্য দিকে, রবিবার জলপাইগুড়ির তৃণমূল প্রার্থী ধর্তিমোহন রায়ের মায়ের শ্রাদ্ধ ছিল। সে কারণে তিনি এদিন খারিজা বেরুবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বোদনি গ্রামের বাড়িতেই দিনভর ছিলেন। এ দিন আর প্রচারে বের হননি তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন