গাছে ঝুলছে স্ত্রী-ছেলে, ধৃত স্বামী ও ভাসুর

বাড়ির পিছনের একটি লিচুগাছের একই ডাল থেকে গলায় দড়ির ফাঁস লাগানো অবস্থায় মা-ছেলের দেহ ঝুলতে দেখেন প্রতিবেশীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালিয়াগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:২৯
Share:

অভিকা ও মৈনাক। নিজস্ব চিত্র

গাছের ডালে এক মহিলা ও তাঁর শিশুপুত্রের দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে আতঙ্ক ছড়াল প্রতিবেশীদের মধ্যে। বৃহস্পতিবার সাতসকালে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ থানার ভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েতের শেরগ্রাম এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম অভিকা দাস (৩৭) ও তাঁর চারবছর বয়সী সন্তান মৈনাক দাস।

Advertisement

এ দিন বাড়ির পিছনের একটি লিচুগাছের একই ডাল থেকে গলায় দড়ির ফাঁস লাগানো অবস্থায় মা-ছেলের দেহ ঝুলতে দেখেন প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহ দু’টি উদ্ধার করে কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি কাঠের চেয়ারও উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ দিন রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মৃতদেহগুলির ময়নাতদন্ত হয়েছে। ঘটনার পরেই এ দিন দুপুরে কালিয়াগঞ্জ থানায় জামাই এবং তাঁর দাদার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন অভিকার মা সুচিত্রা দাস। তার পরেই অভিকার স্বামী জগদীশ দাস ও ভাসুর প্রশান্ত দাসকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার সুমিত কুমার জানান, মা ও ছেলেকে খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ, শুক্রবার তাঁদের রায়গঞ্জের মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলার কথা।

অভিকার বাপের বাড়ির সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ১৫ বছর আগে ইটাহারের রাজগ্রাম এলাকার বাসিন্দা অভিকার সঙ্গে জগদীশের বিয়ে হয়। তাঁদের ১২ বছর বয়সি নামের একটি মেয়েও রয়েছে। অভিকার মায়ের দাবি, গত কয়েকবছর ধরে পারিবারিক বিবাদের জেরে জগদীশ ও তাঁর দাদা প্রশান্ত অভিকার উপর নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন। কখনও রান্না করতে দেরি, আবার কখনও সংসারের বিভিন্ন কাজ না করার অভিযোগে তাঁরা মাঝেমধ্যেই অভিকাকে মারধর করতেন। সুচিত্রার কথায়, ‘‘গত তিন দিন ধরে মেয়ের উপরে জগদীশ ও প্রশান্তের অত্যাচার চরমে উঠেছিল। কিন্তু মেয়ের সংসার ভেঙে যাবে আশঙ্কা করে আমরা আগে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করিনি। অতীতে মেয়ে-জামাইকে বহুবার বুঝিয়ে পারিবারিক বিবাদ মেটানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।’’ তাঁর দাবি, এ দিন সকালে জগদীশ ও প্রশান্ত তাঁর মেয়ে ও নাতিকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। তারপর গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছি।

Advertisement

যদিও ধৃত জগদীশের পাল্টা দাবি, স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগে ভুগছিল। রায়গঞ্জের এক চিকিৎসকের কাছে ওর নিয়মিত চিকিৎসাও চলছিল। এর আগেও তাঁর স্ত্রী মেয়েকে বিষ খাইয়ে খুনের চেষ্টা করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে স্ত্রী এ দিন সকালে ছেলেকে শ্বাসরোধ করে খুন করে ছেলের ও নিজের গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমার ও দাদার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন