দাপাল শব্দাসুর

যেন ক্রিকেটের টেস্ট ম্যাচ! খেলা শুরুর প্রথম এক ঘণ্টায় নতুন বলের গতিবিধি বুঝে নেওয়া। পিচের মতিগতি বোঝা হয়ে যেতেই ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং! শব্দাসুরও দাপাল সেই ভঙ্গিতেই। সন্ধের দিকে শব্দবাজির দাপট কম হলেও রাত বাড়তেই বাড়তে থাকল শব্দবাজির দাপট। বাসিন্দারা বলছেন, পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারি হালকা হতেই দাপট বেড়েছে শব্দাসুরের। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:০৭
Share:

শোভা: ময়নাগুড়ির পথে। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

যেন ক্রিকেটের টেস্ট ম্যাচ! খেলা শুরুর প্রথম এক ঘণ্টায় নতুন বলের গতিবিধি বুঝে নেওয়া। পিচের মতিগতি বোঝা হয়ে যেতেই ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং! শব্দাসুরও দাপাল সেই ভঙ্গিতেই। সন্ধের দিকে শব্দবাজির দাপট কম হলেও রাত বাড়তেই বাড়তে থাকল শব্দবাজির দাপট। বাসিন্দারা বলছেন, পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারি হালকা হতেই দাপট বেড়েছে শব্দাসুরের।

Advertisement

আলিপুরদুয়ার

সময় সন্ধ্যা ছ’টা৷ আলিপুরদুয়ার শহরের নিউটাউনপাড়ার একটি গলিতে ভালই চলছিল আতসবাজি পোড়ানো৷ কিন্তু সময় খানিকক্ষণ যেতে না যেতেই অন্য ছবি। কোনও এক জায়গা থেকে সেখানে চলে এলো প্যাকেটের পর প্যাকেট শব্দবাজি৷ আর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল সেগুলি ফাটানো৷ এলাকার এক যুবক বললেন, “চারিদিকেই তো শব্দবাজি ফাটছে৷ পুলিশও তো নেই৷ তা হলে আমরা ফাটালে দোষের কী আছে!”

Advertisement

ওই যুবকের কথা যে একেবারেই বাস্তব, তা বোঝা গেল পরিবেশবিদ অমল দত্তের কথাতেই৷ তিনি বলেন, “শব্দবাজির বিরুদ্ধে এত প্রচার, এত ধরপাকড়৷ কিন্তু কোথায় কী? মঙ্গলবার রাতে তো কান ঝালাপালা করে দিয়েই শহর জুড়ে ফেটে চলল শব্দবাজি৷ বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন৷”

সম্প্রতি ফালাকাটায় প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকার নিষিদ্ধ শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ৷ জেলার আরও একাধিক থানাতেও ধরা পড়েছিল শব্দবাজি৷ ফলে সেই সময়ই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, পুলিশের নজরদারি থাকলেও জেলায় দেদারে ঢুকে পড়ছে নিষিদ্ধ শব্দবাজি৷ কিন্তু জেলার পুলিশ কর্তারা জানিয়েছিলেন, নিষিদ্ধ শব্দবাজি ধরতে সব থানাকেই তল্লাশি-অভিযান চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু সেই অভিযানে যে প্রচুর শব্দবাজি ধরা পড়েনি তারই যেন প্রমাণ মিলল মঙ্গলবার৷

স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য অভিযোগ, সোমবার রাতেও শহরে মাঝেমধ্যে শব্দবাজি ফেটেছে৷ কিন্তু মঙ্গলবার তা যেন সব সীমাই ছাড়িয়ে যায়৷ সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত যত বেড়েছে ততই শহর জুড়ে বিকট শব্দে ফেটেছে শব্দবাজি৷ গ্রামাঞ্চলেও শব্দবাজি আরও বেশি ফেটেছে বলে অভিযোগ৷ তবে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, শব্দবাজির বিরুদ্ধে প্রতিটি থানা এলাকাতেই রাস্তায় পুলিশের টহলদারি জারি রয়েছে৷

জলপাইগুড়ি

জলপাইগুড়ি তথা গোটা উত্তরবঙ্গেই কালীপুজোর জন্য বিখ্যাত ধূপগুড়ি। মঙ্গলবার রাতে ধূপগুড়ি শহরে যে শব্দবাজি একেবারে ফাটেনি, এমন নয়। তবে শব্দবাজির দাপটে রাতের ঘুম ছুটে যাবে, এ রকম নয়, বলছেন শহরের বাসিন্দারা। শব্দহীন বাজির রোশনাইয়ে রঙিন ছিল এ দিন শহরের বেশিরভাগ এলাকা। উদ্যোক্তারা অনেকেই শব্দবাজির ব্যবহার কমিয়ে ফানুস উড়িয়েছেন। অনেককে দেখা গিয়েছে ফুলঝুরি-চরকি পোড়াতে।

ধূপগুড়ি থানার পুলিশের বক্তব্য কড়া নজরদারি রয়েছে বলেই তাণ্ডব কমেছে শব্দবাজির। এ ছাড়া এ নিয়ে ধরপাকড়ও চলছে। যদিও বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, বুধবার দিনটি না পেরোনো পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। তাঁদের কথায়, ‘‘এ বার মঙ্গলবার রাত দশটার পর অমাবস্যা শুরু হচ্ছে। সুতরাং আজ, বুধবার থেকে যে শব্দবাজির তাণ্ডব শুরু হবে না তা কে জোর দিয়ে বলতে পারে?’’

মালবাজারেও সন্ধ্যা গড়াতেই শব্দবাজি ফাটলেও গত বছরের তুলনায় তা কম বলে জানাচ্ছেন শহরের বাসিন্দারা। তা মেনে নিয়েছেন পুরপ্রধান স্বপন সাহাও। মালবাজার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দেবাশিস চক্রবর্তী অবশ্য জানান, প্রতিদিনই নজরদারি চলছে।

কোচবিহার

রাত বাড়ার সঙ্গেই কোচবিহারে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শব্দবাজির দাপট। কোচবিহার শহর তো বটেই লাগোয়া এলাকাতে একই অবস্থা ছিল মঙ্গলবার রাত থেকেই। গ্রামের দিকেও নিস্তার মেলেনি।

পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ, একটু বেশি রাতে শব্দবাজির দাপটে কানে তুলো অবধি দিতে হয়েছে। এক প্রবীণ বাসিন্দার কথায়, ‘‘কোনও বছর শব্দবাজির হেরফের দেখছি না। একদিকে মাইকের আওয়াজ অন্যদিকে শব্দবাজি— রাতে এই দুইয়ের দাপটে ঘুম হয়নি।’’ পুলিশ এ বারে অনেকটাই কড়া অবস্থান নেয়। পুজোর আগেই একাধিক গ্রেফতার এবং শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা ঘটে। তার পরেও অবস্থা পাল্টায়নি। কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, ‘‘রাতভর নজরদারি চলেছে। বহুক্ষেত্রে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘চারদিক থেকে শব্দবাজির আওয়াজ ভেসে আসে। কোথাও পুলিশ যাবে তা ভেবে পাচ্ছিল না। এ ছাড়া তেমন কেউ অভিযোগও জানায়নি।’’ পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাস গ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ বলে, ‘‘সবাই মিলে পথে নামতে হবে। শুধু পুলিশ দিয়ে কিছু হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন