ধস মোকাবিলায় তৈরি বিশেষ দল, কন্ট্রোল রুম

চার বছর আগের ভয়াবহ স্মৃতি উসকে দিয়েছে, গত মাস জুড়ে কয়েক দফায় কেঁপে ওঠা পাহাড় ও সমতল। এরই মধ্যে জুনের প্রথম থেকেই টানা বৃষ্টিতে প্রায়ই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। আলগা হতে শুরু করেছে পাহাড়ের মাটিও। দার্জিলিঙে এখনও না হলেও সিকিমের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক ধস নামায়, প্রহর গোনা শুরু করেছেন দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। তাই আর দেরি না করে পুরো দস্তুর প্রস্ততিতে নেমে পড়েছেন তাঁরা।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৫ ০২:৩৪
Share:

চার বছর আগের ভয়াবহ স্মৃতি উসকে দিয়েছে, গত মাস জুড়ে কয়েক দফায় কেঁপে ওঠা পাহাড় ও সমতল। এরই মধ্যে জুনের প্রথম থেকেই টানা বৃষ্টিতে প্রায়ই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। আলগা হতে শুরু করেছে পাহাড়ের মাটিও।

Advertisement

দার্জিলিঙে এখনও না হলেও সিকিমের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক ধস নামায়, প্রহর গোনা শুরু করেছেন দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। তাই আর দেরি না করে পুরো দস্তুর প্রস্ততিতে নেমে পড়েছেন তাঁরা। যার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সম্প্রতি জেলায় মহকুমা ভিত্তিক ‘ক্যুইক রেসপনস টিম’ বা ‘কিইউআরটি’ গড়া হল। জেলা দফতরে খুলে ফেলা হয়েছে একটি বিশেষ কন্ট্রোল রুমও।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সমতলের মহকুমাতেও একটি টিম রাখা হলেও জোর দেওয়া হচ্ছে পাহাড়ের উপরেই। আর প্রতিটি টিমে সিভিল ডিফেন্স, রিলিফ ডিপার্টমেন্ট মিলিয়ে ২৫ জন করে প্রশিক্ষিত সদস্যকে রাখা হয়েছে। প্রতিটি দলের হেডকোয়ার্টার হিসেবে মহকুমা প্রশাসনের দফতরে দড়ি, গাছ কাটার মেশিন-সহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিও রাখা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে পালা করে থাকছেন বিপর্যয় মোকাবিলার কর্মীরা। জেলা সদর দফতরে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব নিয়মিত পরিস্থিতির কথা জানানোর নির্দেশও দিয়েছেন।

Advertisement

জেলাশাসক বলেন, ‘‘একে বর্ষার মরসুম। কিছু দিন আগেও কয়েক বার ভূমিকম্প হয়েছে। এমনিতেই ধসপ্রবণ এলাকা। তাই আমরা প্রস্তুত হয়েছি। সম্প্রতি গোটা জেলার আধিকারিকদের নিয়ে এক দফায় বৈঠকও করা হয়েছে।’’

২০১১ সালে সিকিম জুড়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ জেলার বাসিন্দারাও তার আঁচ পান। পাহাড়ে ধস নামা ছাড়াও প্রচুর বাড়ি ঘরের ক্ষতি হয়। আগের বছর, জুলাই মাসেই ধস নেমে পাগলাঝোরা এলাকায় ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। সবচেয়ে বেশি সমস্যা কালিম্পং, সিকিমগামী এক মাত্র জাতীয় সড়ক ৩১ এ-কে নিয়ে। গত বছরও লিকুভির এলাকায় ওই রাস্তা পালা করে বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এলাকায় ‘গ্রেফ’ কর্মীদের প্রায় সারা বছরই মোতায়েন রাখা হয়। এ ছাড়া চিত্রে, তিস্তাবাজার, বিরিক, সেবক ও কালিঝোরাও এলাকাও ধসপ্রবণ।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন প্রধান সুবীর সরকার বলেন, ‘‘গত ১০০ বছর ধরে এই এলাকা ধস প্রবণ। হঠাৎ করে প্রচুর বৃষ্টির প্রবণতাও রয়েছে। ৫০-৬০ দশকে দার্জিলিং পাহাড়ে ভয়াবহ ধসের ঘটনা ঘটেছে। যেমন এ দশকে পাগলাঝোরা, তিনধারিয়ায়। নানা কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রশাসনকে সজাগ থাকতেই হবে।’’

দার্জিলিং জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার অনিন্দ্য সরকার জানান, প্রকৃতি নিজের নিয়মে চলবেই। আমাদেরও নিজের মত করে প্রস্তুত থাকতে হবে, ক্ষয়ক্ষতি যাতে কম হয়। গাছ পড়া থেকে কোনও কারণে রাস্তা বন্ধ হলেই তা খোলার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা ‘কিইউআরটি’ টিম ছাড়াও জেলার বাছাই করা ২০০ স্কুলের ছেলেমেয়েদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া ব্যবস্থা করছি। আপৎকালীন পরিস্থিতি হলে তা পুলিশের সাহায্যে বাসিন্দাদের জানিয়েও দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন