ধানতলায় তরুণীর অর্ধনগ্ন দগ্ধ দেহ উদ্ধার, ২৪ ঘণ্টা পরেও আঁধারে পুলিশ!

এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে মোটরবাইক নিয়ে আমবাগানের রাস্তায় টহলদারি চালিয়েছেন পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:০৯
Share:

ঘটনাস্থলে: ধানতলায় ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছেন পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া এবং অন্য কর্তারা।

আমবাগানে তরুণীর অর্ধনগ্ন দগ্ধ দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টা পরেও অন্ধকারে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত যুবতীর নাম, পরিচয় কিছুই জানা যায়নি। ফলে তিনি আদৌ এ রাজ্যের না পাশের রাজ্য থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল, সে বিষয়েও ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। শুক্রবারও ইংরেজবাজারের ধানতলা গ্রামে ঘটনাস্থলে গিয়ে পোড়া কাপড়, মাটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তরুণীর দু’হাতে তিনটি রুপোর আংটি এবং লোহা ও রুপোর দু’টি বালা ছিল। সে সব সূত্র ধরেই তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে যুবতীর পরিচয় জানা না যাওয়ায় তদন্তের গতি ধাক্কা খাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তাদেরই কেউ কেউ।

Advertisement

মালদহের বিহার সীমানা এবং বাংলাদেশ সীমান্তের বহু অংশে নিরাপত্তা যথেষ্ট জোরদার নয় বলে স্থানীয় সূত্রে দাবি উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন দাবি করেন, সীমান্তঘেঁষা এলাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। এ ক্ষেত্রে কী ঘটেছে তা জানতে পুলিশ কমিশনারেটের তদন্ত চলছে। হায়দরাবাদের গণধর্ষণ করে পুড়িয়ে খুনে অভিযুক্তদের পুলিশি এনকাউন্টারে মৃত্যুর প্রতিবাদ করে মুখ্যমন্ত্রী বিচারব্যবস্থার উপরে আস্থা রাখার কথাও বলেন।

এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে মোটরবাইক নিয়ে আমবাগানের রাস্তায় টহলদারি চালিয়েছেন পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। পুলিশ জানিয়েছে, আমবাগানে ঢোকার তিনটি রাস্তা। মূল রাস্তাটি ৫০০ মিটার দূরে ধানতলা গ্রাম থেকে এসে মিশেছে। মালদহ স্টেশনের ডিজেল শেড এলাকা থেকে একটি রাস্তা দিয়ে সহজে বাগানে পৌঁছনো যায়। আর একটি রাস্তা দিয়ে লক্ষ্মীপুর, মানিকচক হয়ে বিহারের দিকে যাওয়া যায়। এ দিন ঘটনাস্থল থেকে ১০০ মিটার দূরের একটি পুকুর ধার থেকে বিহারের একটি বিড়ির প্যাকেট উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সেই প্যাকেটেরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলেই ধর্ষণের বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গ্রামে কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। সেই ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

এ দিকে, ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরে আড়াপুর টিপাজানি আহ্লাদিনী ঘোষ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মানসী দত্ত বলেন, ‘‘স্কুলের ঠিক পেছনেই ঘটনাটি ঘটেছে। নির্জন আমবাগান দিয়ে আমাদের স্কুলের বহু মেয়ে যাতায়াত করে। দিনেও ওখান দিয়ে একা যাতায়াত করতে ভয় হয়।’’ আতঙ্কে রয়েছে পড়ুয়াও। স্কুল সময়ে এলাকায় পুলিশ পিকেটের দাবি তুলেছেন মানসী।

ধানতলা গ্রামের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “শহর সংলগ্ন এলাকায় নৃশংস ভাবে ধর্ষণের পরে পুড়িয়ে এক তরুণীকে খুন করা হল। অথচ, পুলিশ এখনও তাঁর নামই উদ্ধার করতে পারল না। ঘটনাস্থলে পুলিশ কুকুর নিয়ে যাওয়া হয়নি। রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানানো হবে।” আজ, শনিবার মালদহে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় আসছেন বলে জানিয়েছেন দলের মহিলা মোর্চার সভানেত্রী সুতপা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পুলিশ ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এর প্রতিবাদে আন্দোলন করা হবে।”

এ দিনই গ্রামে যান চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান তথা মালদহের তৃণমূলের মহিলা নেত্রী চৈতালী ঘোষ সরকার। তিনি বলেন, “ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়। আশা করছি দ্রুত অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করবে পুলিশ।”

বৃহস্পতিবার সকালে ইংরেজবাজার শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার কোতোয়ালি পঞ্চায়েতের ধানতলা গ্রামের নির্জন আমবাগান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ওই তরুণীর অর্ধনগ্ন দগ্ধ দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দেহটি মালদহ মেডিক্যালে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, হায়দরাবাদের মতোই এই তরুণীকেও ধর্ষণের পরে পুড়িয়ে খুন করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর মুখ থেকে কোমর পর্যন্ত ঝলসে গিয়েছে। ফলে চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, তরুণীর বয়স ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে। উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। মালদহের সমস্ত থানার নিখোঁজ তালিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন