Education

education: ভাঙা ঘরেই নিজেকে গড়ছেন ববিতা

দু’বছর কলেজের ফি দিতে পারেননি ববিতা রায়। বৃত্তির টাকা দিয়ে ল্যাপটপ আর প্রিন্টার কিনেছেন। করোনাকালে কলেজ বন্ধ দীর্ঘদিন।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২১ ০৭:১৭
Share:

লড়াকু: নিজের ঘরে ববিতা রায়। নিজস্ব চিত্র।

কুড়িয়ে আনা ফ্লেক্স দিয়ে বেড়ার ঘরের চার দেওয়াল জুড়ে তাপ্পি মারা। তবু দেওয়াল ভরা অজস্র ছিদ্র। মাথার উপরে ফুটো টিনের চালেও কাপড়-প্লাস্টিকের জোড়াতালি। পায়ের নীচে মেঝে বলতে শুধু মাটি। সেই ঘরের তক্তাপোষে রাখা একটি ল্যাপটপ আর প্রিন্টার। দরমা-বেড়ার সেই ভাঙা ঘরের মেয়ে সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী।

Advertisement

দু’বছর কলেজের ফি দিতে পারেননি ববিতা রায়। বৃত্তির টাকা দিয়ে ল্যাপটপ আর প্রিন্টার কিনেছেন। করোনাকালে কলেজ বন্ধ দীর্ঘদিন। বাড়িতে বই কিনে পড়ার ক্ষমতা নেই। এক-একটি বইয়ের দাম হাজার টাকা থেকে শুরু। তাই বইয়ের পৃষ্ঠার প্রয়োজনীয় অংশ প্রিন্ট করেই পড়া চালাচ্ছেন। ভাঙা ঘরের আর একপাশে পড়াশোনা করে তাঁর বোন। সেই বোন ক্লাসে প্রথম হয়। তার টিউশনির ফি দিতেই বাবার রোজগারের বেশিটা শেষ হয়ে যায়। বাবা রিকশা চালান। মেয়েদের পড়াশোনাতেই রোজগারের অনেকটা চলে যায়। মাসখানেক ধরে শাক-ভাত খেয়ে আছে পরিবারটি। ওদের কথায়, দুর্গাপুজোর একদিন শেষবার মাছ রান্না হয়েছিল বাড়িতে। আক্ষেপ নেই, পড়া চালিয়ে যেতে চায় ওরা। ববিতা বলেন, ‘‘সবাইকে দেখাতে চাই, রিকশাচালকের মেয়েও ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে।’’

জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া কোনপাকড়ির বোদাপাড়ার বাসিন্দা আশিস রায় রিকশা চালান জলপাইগুড়ি শহরে এসে। রিকশা নিজেরও নয়, ভাড়ার। তাঁর বড়মেয়ে ববিতা কোচবিহার সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রিক্যাল সায়েন্সের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। ছোটমেয়ে মৌমিতা নবম শ্রেণি। সপ্তম শ্রেণি থেকে সে ক্লাসে প্রথম হয়। তারও কোচিং ক্লাসের ফি আছে। পুজোর সময়ে রিকশা চালিয়ে বাড়তি রোজগারের অনেকটা দিয়ে কোচিংয়ের বাকি মেটাতে হয়েছে। তখনই একদিন বাড়িতে মাছ রান্না হয়েছিল। এখন দু’বেলা শুধুই শাক-ভাত। কোনওদিন আলুর ঝোল বা ডাল, ববিতা বলেন, ‘‘জয়েন্টে ফর্ম পূরণ করার পাঁচশো টাকাও ছিল না। বইয়ের দোকানের এক দাদু ২০০ টাকা দিয়েছিলেন। বাবা-মা দিয়েছিল ৩০০ টাকা। তখন বহুদিন বাড়িতে শুধু সেদ্ধ-ভাত হয়েছিল। কোনও কোনও দিন রান্নাও হয়নি। মামাবাড়ি, মাসির বাড়িতে গিয়ে ভাত খেয়েছি সেই দিনগুলিতে।’’

Advertisement

ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির টাকাও তুলে দিয়েছেন পুরনো শিক্ষক-পরিচিতরা৷ কলেজে একটি স্কলারশিপ পেয়েছেন ববিতা। বছরে ১৯ হাজার টাকার। কিন্তু পড়ার খরচ বছরে প্রায় ২৭ হাজার টাকার। তাই দু’বছরের ফি বাকি। ববিতা বলেন, ‘‘পুরো টাকা দিতে না পারলে তো পাশ করেও হাতে রেজাল্ট পাব না। জানি না কী ভাবে কী হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement