চোর অপবাদে মার, স্কুলছাত্র আত্মঘাতী

চোর অপবাদ দিয়ে মারধর করা হল এক স্কুল ছাত্রকে। অভিযোগ, সালিশি সভা ডেকে তার বিচার করা হবে বলে হুমকি দেন তার মামা-মামিমা। অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে ছাত্রটি আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন পরিবারের লোকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০২:০২
Share:

সুব্রত হালদার

চোর অপবাদ দিয়ে মারধর করা হল এক স্কুল ছাত্রকে। অভিযোগ, সালিশি সভা ডেকে তার বিচার করা হবে বলে হুমকি দেন তার মামা-মামিমা। অভিমানে গলায় ফাঁস দিয়ে ছাত্রটি আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন পরিবারের লোকেরা।

Advertisement

সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদহের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশহাট্টি এলাকায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। মঙ্গলবার সকালে মৃত ছাত্রের পরিবারের লোকেরা মামা মামিমা সহ তাঁদের দুই ছেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন মালদহ থানায়।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সুব্রত হালদার (১৭)। সে পুরাতন মালদহের কালাচাঁদ হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মৃতদেহটি ময়না তদন্ত করা হচ্ছে। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’’

Advertisement

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সুব্রতর বাবা নিপেন বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। তিনি মাছ ধরার কাজ করেন। তাঁর চার ছেলে মেয়ে রয়েছে। বছর দুয়েক আগে পথ দূর্ঘটনায় বড়ো ছেলে নয়ন মারা যান। নিপেনবাবুর স্ত্রী বাদলিদেবীরা তিন ভাই বোন। একই বাড়িতে দুই দাদার সঙ্গে তিনিও থাকতেন। তবে তাঁরা পৃথক ভাবে খাওয়া-দাওয়া করতেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাদলিদেবীদের সঙ্গে তাঁর ছোট দাদা রঞ্জন হালদারের পরিবারের প্রায় বচসা হত। রঞ্জনবাবুও মাছ ধরার কাজ করেন। তাঁর দুই ছেলে বিশু ও কালাচাঁদও একই পেশায় যুক্ত রয়েছে।

অভিযোগ, গত সোমবার দুপুরে সুব্রত রঞ্জনবাবুর বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময় রঞ্জনবাবুর স্ত্রী কল্পনা হালদার চোর অপবাদ দিয়ে তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ। পরে বিশু ও কালাচাঁদ বাড়ি ফিরে গিয়ে ফের মারধর করে। দুপুর থেকে সুব্রতকে চোর অপবাদ দিয়ে চলে মারধর। তাঁর মা বাদলিদেবী বাধা দিতে গেলে তাঁকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ওইদিনই সন্ধ্যেবেলা কাজ থেকে বাড়ি ফিরে আসেন রঞ্জনবাবু। তিনিও কুড়ুল দিয়ে সুব্রতকে মারতে যান। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। তখনই রঞ্জনবাবু সালিশি সভা ডেকে সুব্রতর বিচার করা হবে বলে হুমকি দেয়। তারপর থেকেই নিখোঁজ হয়ে যায় সুব্রত। রাত পর্যন্ত বাড়ি না ফেরার পরিবারের লোকেরা খোঁজ খবর শুরু করে দেন। পরে বাড়ির পেছনে একটি তেঁতুল গাছে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের লোকেরা। তড়িঘড়ি ছাত্রটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় মৌলপুর গ্রামীণ হাসপাতালে। তবে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দেন অভিযুক্ত মামা মামি ও তাঁর দুই ছেলে। সুব্রতের বড়ো মামা জগৎ হালদার বলেন, ‘‘বোনদের পরিবারকে পছন্দ করতেন না ভাই-এর পরিবারের লোকেরা। প্রায় তাঁদের মারধর করতেন। এই দিন সুব্রত রঞ্জনের ঘরের বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময়ই তাকে চোর বলে মারধর করে। আমার ভাই এর স্ত্রী কল্পনা দাবি করে বলেন, তাঁর ঘরে ৮৫ হাজার টাকা রয়েছে। সেই টাকা চুরি করেছে বলে মারধর দেয়। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিল। পরে তার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।’’

মৃত ছাত্রের মা বাদলিদেবী বলেন, ‘‘আমার ছেলে খুবই ভালো। শান্ত স্বভাবের। তাকে চোর অপবাদ দিয়ে দিনভর মারধর করা হয়। তাকে নিয়ে বিচার করা হবে। সবার সামনে চোর প্রমাণিত করে শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানায় আমার এক দাদা রঞ্জন। যা সহ্য করতে পারেনি আমার ছেলে। তাদের জন্যই আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে। আমরা তাদের শাস্তি চাই।’’ ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের নেপাল হালদার বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুব দুঃখ জনক। ছেলেটি কেন আত্মহত্যা করল তা পুলিশকে দ্রুত খতিয়ে দেখে আইননত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement