মানা করেছিলাম, শুনলই না!

বুধবার বেলার দিকে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় রাজীবের মর্মান্তিক পরিণতির পর গোটা পশ্চিম দেওগাঁ এলাকাতেই এখন শোকের ছায়া। ওই এলাকায় বাড়ি রাজীবের। বাবা কৃষক। বাড়িতে তিনি ছাড়াও মা এবং এক দিদি রয়েছেন রাজীবের।

Advertisement

অরুণাংশু মৈত্র 

ফালাকাটা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৮
Share:

—প্রতীকী ছবি।

বাড়ির বড়রা রোজই নিষেধ করতেন। অন্তত পরীক্ষার সময়টা যাতে বন্ধুদের মোটরবাইকে চেপে পরীক্ষাকেন্দ্রে না যায়, সে ব্যাপারে বোঝাতেন সকলে। কিন্তু কারও কথা শোনেনি দেওগাঁ হাইস্কুলের ছাত্র রাজীব দাস। বুধবারের দুর্ঘটনার পরে শোকস্তব্ধ সেই রাজীবের বাড়ির বড়রাই এখন বলছেন, ‘‘আমরা যদি আর একটু কড়া হতাম, তা হলে মর্মান্তিক পরিণতি দেখতে হত না।’’

Advertisement

বুধবার বেলার দিকে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় রাজীবের মর্মান্তিক পরিণতির পর গোটা পশ্চিম দেওগাঁ এলাকাতেই এখন শোকের ছায়া। ওই এলাকায় বাড়ি রাজীবের। বাবা কৃষক। বাড়িতে তিনি ছাড়াও মা এবং এক দিদি রয়েছেন রাজীবের। বুধবারের ঘটনায় একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন রাজীবের বাবা বাবুরাম দাস। শুধু এটুকুই বলছেন, “ও অন্য বন্ধুর সঙ্গে মোটরবাইকে চেপেছিল!’’ ঘনঘন জ্ঞান হারাচ্ছিলেন মা পুষ্পরানি দাস। হাসপাতালেই তাঁর লুটিয়ে পড়া কান্না দেখে চোখে জল এসে যায় অনেকেরই।

রাজীবের কাকা প্রদীপ দাস বলেন, “রাজীব রোজই বন্ধুদের সঙ্গে মোটরবাইক চেপেই পরীক্ষা দিতে যেত। আমরা ওকে বারবার নিষেধ করি। কিন্তু কারও কথাই ও শোনেনি। উল্টে জোর করলে জেদ করত। প্রতিদিনই পরীক্ষার জন্য বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়েও যেত। এখন ভাবছি, আর একটু কড়া হলেই হয়তো এই দিনটা দেখতে হত না।”

Advertisement

এ দিনের ঘটনার পর এলাকার অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এই বয়সী মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের হাতে মোটরবাইক এলো কী করে? একই প্রশ্ন তুলছেন, রাজীব যে স্কুলে পড়ত, সেখানকার শিক্ষকরাও। দেওগাঁ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপক বর্মণ বলেন, ‘‘ অভিভাবকদের বারবার করে বলেছি, কোনও ভাবেই ছাত্র-ছাত্রীদের যেন মোটরবাইক দেওয়া না হয়। বিশেষ করে, লাইসেন্স না থাকলে তো একেবারেই নয়। আমাদের কথা সবাই শুনলে এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনা এড়ানো যেত।’’

স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি সহিদুল ইসলামও বলেন, ‘‘পরীক্ষার দিন কী করে পরীক্ষার্থীদের হাতে অভিভাবকরা মোটরবাইকের চাবি তুলে দেন, সেটাই বুঝতে পারছি না।’’

ঘটনার পর ফালাকাটা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে গিয়ে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রসঙ্গ তোলেন ফালাকাটার বিধায়ক অনিল অধিকারী। তিনি জানান, এই নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। রাজীবের বন্ধুরা, যারা মোটরবাইক চালাচ্ছিল, ঘটনার পরে একমাত্র রাজীবুল ছাড়া বাকি সকলেই এ দিন পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু ঘটনার জেরে তারা চুপ করে গিয়েছে। কথা বলতে নারাজ তাদের অভিভাবকরাও। তবে ফালাকাটা থানার এক পুলিশ কর্তা বলেন, ‘‘বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন